সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত ৫ লাখ মানুষ

১৫ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি গোহারুয়া হাসপাতাল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত ৫ লাখ মানুষ

দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে এই হাসপাতাল ভবন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ২০ শয্যার গোহারুয়া হাসপাতালটি ১৫ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চার উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে নির্মিত এ হাসপাতালের ছয়টি ভবন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে অনেক অবকাঠামো। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে চরানো হচ্ছে গরু-ছাগল। ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় হাসপাতালটি। মূল ভবন ছাড়াও তিনটি দ্বিতল ও দুইটি একতলা ভবন বানানো হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের জন্য। কোনো চিকিৎসক পদায়ন না করে উদ্বোধন করায় শুরুতেই হোঁচট খায় হাসপাতালের কার্যক্রম। এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে এটি চালু ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের বিষয়ে চিঠি পাঠান কুমিল্লার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান। ওই বছরই ছয়জন ডাক্তার ও ছয়জন নার্সের পদ সৃষ্টি করে জুন মাসে নিয়োগ দেওয়া হয় মাত্র একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে। ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি এ হাসপাতালে ছিলেন কাগজে-কলমে। তিনি চলে যাওয়ার পর দুজন নারী চিকিৎসক, একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও গাইনি বিশেষজ্ঞ কিছুদিন দায়িত্ব পান। তাদের কেউ বাস্তবে কর্মস্থলে আসেননি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঢাকায় প্রেষণে যান গাইনি চিকিৎসক। চিকিৎসা কর্মকর্তা সপ্তাহে দুই দিন এই হাসপাতাল ও চার দিন নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন। কিছুদিন পর তিনিও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরই মধ্যে প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে যায় হাসপাতালটি। ২০১৬ সালে কাগজে-কলমে দুজন নার্স পদায়ন করা হলেও ডাক্তার না থাকায় বন্ধ থাকে কার্যক্রম। ২০১৭ সালে স্থানীয় এমপি তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী (বর্তমান অর্থমন্ত্রী), তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন। তারা পুনরায় পুরোদমে চালুর আশ্বাস দেন। পরে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। ২০১৭ সালে ১৩টি পদ সৃষ্টি করা হয়। যেখানে মোট ১৮ জন নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু তারপরও আলোর মুখ দেখেনি হাসপাতালটি। সবশেষ ২০২০ সালের জুন মাসে ৫ জনকে পদায়ন করা হলে বর্তমানে তারা আউটডোরে সেবা দিচ্ছেন। ইনডোর সেবা দেওয়ার জন্য এখনো কোনো শয্যা স্থাপন করা হয়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোটের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত হাসপাতালটির সঙ্গে সংযোগ সড়ক রয়েছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও সেনবাগের। পাশাপাশি লাকসামের একাংশের মানুষের চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সুযোগ আছে এ হাসপাতালে। সরেজমিন হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে গরু চরছে। হাসপাতাল ছাড়া বাকি ভবনগুলো দখল হয়ে গেছে। সেখানে গবাদিপশুর খাবার ও লাকড়ি রাখা হয়েছে। কিছু ভবন ব্যবহৃত হচ্ছে হাঁস-মুরগির খামার হিসেবে। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। বৈদ্যুতিক সুইচ-মিটার নষ্ট হয়ে গেছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডবয়কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৩ জুলাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নাঙ্গলকোটের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া। তিনি লিখেন, ‘গোহারুয়া ২০ শয্যার হাসপাতাল ভূতের বাড়ি ও গরু-ছাগলের আড্ডাখানা। হাসপাতালটি চালু করে এই অঞ্চলের মানুষকে সেবা করার সুযোগ দিন।’ নাঙ্গলকোটের জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গোহারুয়ার স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা ভূঁইয়া বলেন, ‘হাসপাতালটিতে মাঝে মধ্যে একজন চিকিৎসক বসেন। এটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে করোনার এই সংকটকালে মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নাঙ্গলকোট ও লাকসাম দৌড়াতে হবে না। পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হওয়া অতি জরুরি। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করে ইনডোরের শয্যাগুলো চালু করা হোক।’ নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা দেবদাস দেব বলেন, ‘বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি।’ কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হলে বাড়তি চিকিৎসক দরকার হবে। যা দেওয়ার সামর্থ্য বর্তমানে আমাদের নেই। কভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইনডোর ও আউটডোর দুটোতেই সেবা চালু করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর