বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লক্কড়-ঝক্কড় মাইক্রোবাসই ভরসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

লক্কড়-ঝক্কড় মাইক্রোবাসই ভরসা

হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স পেতে কল করেছিলেন। কেউ ফোন ধরেননি। ফায়ার ব্রিগেডের ফোন রিসিভ করা হলেও জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স ফ্রি নেই। তিন দিন আগে এমনই ভোগান্তিতে পড়েছিলেন শিরোইল এলাকার কাওসার আলী। করোনা রোগী শুনেই রাজশাহীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাজশাহীর সরকারি হাসপাতালের ১৯টি অ্যাম্বুলেন্সেও রোগী পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সে একমাত্র যাতায়াত সুবিধা ছাড়া আর কোনো সুবিধা রোগীদের জন্য নেই। এমনকি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স চালকই সেটি তত্ত্বাবধায়ন করেন। অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্সে সিলিন্ডার থাকলেও থাকে না অক্সিজেন। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা পেতে গুনতে হয় তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া। ফলে বেসরকারি লক্কড়-ঝক্কড় মাইক্রোবাসই এখন ভরসা রাজশাহীর সাধারণ রোগীদের। রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার জানান, জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১১টি অ্যাম্বুলেন্স আছে।

সবগুলো অ্যাম্বুলেন্সেই আছে রোগীদের জন্য অক্সিজেন সুবিধা। তবে এসব অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিয়ন্ত্রণে। রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হলে চালকই অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাস্ক রোগীর নাকে-মুখে পরিয়ে দেন। এর জন্য আলাদা কোনো টেকনিশিয়ান বা চিকিৎসক থাকে না। সিভিল সার্জন বলেন, ‘যে কাউকে দু-একবার দেখিয়ে দিলে তিনিই রোগীর নাকে-মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিতে পারবেন। আমাদের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাই কোনো অ্যাম্বুলেন্সেই আলাদা টেকনিশিয়ান বা চিকিৎসক-নার্স প্রয়োজন হয় না। চালকরাই ওই কাজটি করে থাকেন।’ রাজশাহীর দুর্গাপুরের হরিরামপুর গ্রামের নওসাদ আলী জানান, কয়েক দিন আগে তার বাবাকে দুর্গাপুর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দুর্গাপুর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অক্সিজেন ছিল না। তারপরেও রোগীকে অনেক কষ্টে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
 

সরকারি নিয়মে ভাড়া সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা হলেও দিতে হয়েছে ২ হাজার টাকা। অথচ বাইরের মাইক্রোবাসগুলোতে গেলে সর্বোচ্চ খরচ হতো দেড় হাজার টাকা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী পরিবহনের জন্য আটটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেসবে চালকরাই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী ওঠানোর পর যা কিছু করার করতে হয় রোগীর অভিভাবককেই। আর চালক শুধু অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে যান। ফলে রাজশাহী হাসপাতাল ঘিরে আছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের দাপট। এসব অ্যাম্বুলেন্সের ৯৯ ভাগই মাইক্রোবাস। সামনে সাইরেন লাগিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় মাইক্রোবাসগুলোকে অ্যাম্বুলেন্সে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও রোগীদের জিম্মি করে বাড়তি অর্থ আদায় করে থাকেন। রোগী মারা গেলে রাজশাহী হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছানোর জন্য ৪-১০ গুণ হারে টাকা আদায় করেন চালকরা। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতাল চত্বরে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। হাসপাতালে যারা আসেন, তাদের দিকটি মানবিকভাবে বিবেচনা করে ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তারপরেও কেউ অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর