ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য একশ্রেণির কালো টাকার মালিক ক্রিপ্টোকারেন্সির বিটকয়েনকে বেছে নিয়েছেন। এতে জুয়া, হুন্ডি, চোরাচালান, সাইবার চাঁদাবাজিসহ অবৈধ লেনদেনও বেড়ে গেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এদিকে দেশের প্রচলিত আইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি অবৈধ বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সিআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধ বলার সুযোগ নেই বলে বেশির ভাগ কর্মকর্তা মত দেন বলে জানা গেছে।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনায় কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েনের কোনো অনুমোদন নেই। যেহেতু অনুমোদন নেই, সুতরাং এই জাতীয় লেনদেন বৈধ নয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে স্বীকৃত নয়, এক কথায় নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংক এই মুদ্রার ব্যবহার বৈধ করেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মনে করে এই মুদ্রার ব্যবহার মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়ে সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বরে।
সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন হচ্ছে, যা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়। গতকালের আলোচনায় কয়েকটি আইনের কথা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ২৫-বি (১)। এই ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি কোনো আইনের নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ ভঙ্গ করে অথবা কোনো আইন অনুসারে আদায়যোগ্য শুল্ক বা কর ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যায় তা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭ এর ৮ ধারা অনুযায়ী এসব কারেন্সি অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসা অবৈধ। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ ধারা অনুযায়ীও শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এ ছাড়াও ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর দ্বারা অবৈধ।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস-ফাইন্যান্সিয়াল ক্রইম) হুমায়ুন কবীর এ প্রতিবেদককে বলেন, নিয়মিত মামলা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক যে মতামত দিয়েছে সেটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধতা দেয়নি। তারা বলেছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো আইন আমাদের দেশে নেই। তবে অন্য আইনে এটিকে অবৈধ বলা যেতে পারে।
জানা গেছে, গত ১৮ মে এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক শফিউল আজম ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান জানান সিআইডিকে। চিঠিতে বলা হয়, ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে সরাসরি অপরাধ বলার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয়। তবে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর আওতায় অপরাধ হতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিআইডি এ নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে।
২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিল। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে- ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুমোদিত নয়।