শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

টাকা ছাড়া সেবা মেলে না শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে

রাহাত খান, বরিশাল

টাকা ছাড়া সেবা মেলে না বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে। বকশিশের নামে প্রতিটি পদে পদে ঠেকিয়ে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। নতুন রোগীকে ওয়ার্ডে নেওয়া, অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া, খালি সিলিন্ডার পাল্টে দেওয়া, আইসিইউ ম্যানেজ করে দেওয়া, শয্যার আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ময়লা অপসারণ, সুস্থ রোগীকে ওয়ার্ডের বাইরে বের করে দেওয়াসহ সব কিছুই অর্থ দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এমনকি করোনা ওয়ার্ড থেকে বের হওয়া লাশের কফিন ঘিরেও ব্যবসা জমজমাট সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় করোনা বিশেষ আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে গুটি কয়েক কর্মচারীর। এসব প্রকাশ্য হলেও চোখে পড়ে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকরা সব শেষ কবে করোনা ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তবে করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিসহ অর্থ আদায়ের অভিযোগ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। করোনা ওয়ার্ডে ভুক্তভোগীরা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগীকে করোনা ওয়ার্ডের সামনে নিয়ে গেলে পড়ে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। টিকিট কাটাসহ ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলে যায় অন্তত ৪০ মিনিট। এরপর রোগীকে স্ট্রেচারে করোনা ওয়ার্ডে নিতে সহায়তা লাগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। এ ক্ষেত্রে অর্থ দিতে হয় তাদের। ওয়ার্ডে যাওয়ার পর রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বয় কিংবা আয়াদের অর্থ না দিলে মেলে না সিলিন্ডার।

আবার সিলিন্ডার দেওয়া হলেও খালি সিলিন্ডার পাল্টে দেওয়ার সময় দিতে হয় অর্থ। শয্যার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় শয্যা ম্যানেজ করার নামেও অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা। আবার আইসিইউ শয্যা ম্যানেজের নামেও রোগীদের ঠেকিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ওয়ার্ড মাস্টারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। রোগীর বর্জ্য অপসারণসহ শয্যার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেও দিতে হয় অর্থ। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা রোগীদের ওষুধ কিনে দেওয়ার নামে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে যাওয়ার সময়ও অর্থের আবদার করেন কর্মচারীরা। আবার রোগীর লাশ বের হলেও বিনা টাকায় ছাড়েন না তারা। লাশ নামিয়ে দিতেও অর্থ দিতে হয় তাদের। আবার উপসর্গ কিংবা করোনায় মারা যাওয়া রোগীর কফিন ম্যানেজ করে দেওয়ার নামেও সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। ৭০০ টাকার একটি কফিন ২ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগও রয়েছে ওয়ার্ড মাস্টারদের বিরুদ্ধে। করোনার নমুনা পরীক্ষায় আগে সিরিয়াল পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু কর্মচারী। প্রকাশ্যে এভাবে অবৈধ অর্থের লেনদেন হলেও কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে না। ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা করোনা ওয়ার্ড বকশিশ মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনা ওয়ার্ডে ৫৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। একই সঙ্গে ১৭০ জন রোগী অক্সিজেন সেবা পাওয়ার কথা। প্রতিদিন দুই বেলা সিলিন্ডার রিফিল করে দেয় সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। কিন্তু তারপরও অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। করোনা ওয়ার্ডে প্রতি পদে পদে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ গত বৃহস্পতিবার শুনেছেন তিনি। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আজ শনিবার বেলা ১২টায় করোনা ওয়ার্ডের ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। শিগগিরই করোনা ওয়ার্ড বকশিশ মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন পরিচালক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর