বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চিকিৎসার পরিধি বেড়েছে বরিশালে, সিলেটে পাঁচ উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

চিকিৎসার পরিধি বেড়েছে বরিশালে, সিলেটে পাঁচ উদ্যোগ

বরিশালে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। শেরেবাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা। পিসিআর ল্যাবেও শনাক্তের হার গত জুলাই থেকে ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ১২৩ জন করোনায় আক্রান্তসহ ৩২৭ জন রোগী। গতকাল সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে মারা গেছে ১৪ জন রোগী। এর আগের দিন মৃত্যু হয়েছে করোনা ওয়ার্ডের ইতিহাসে সর্বাধিক ২৩ জনের। গত সোমবার রাতে মেডিকেল কলেজের আরটিপিসিআর ল্যাবের সব শেষ রিপোর্টে নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪৩.১৫ ভাগ। এর আগে রবিবারের রিপোর্টে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫৫.৮৫ ভাগ।

শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৩০০টি। আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন ২৫ জন রোগী, ১৫ জন পাচ্ছেন হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সেবা এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবার আওতায় রয়েছেন ৮৫ জন রোগী। বাকি রোগীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। যথা সময়ে অক্সিজেন সুবিধা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন মুমূর্ষু রোগীরা। এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত জুলাই মাসে জেনালের হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড অন্যত্র স্থানান্তর করে সেখানে ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড চালু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে এবার নগরীর কালীবাড়ি রোডের মা ও শিশু কল্যাণে কেন্দ্রে নারী রোগীদের জন্য ২০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিলেটে করোনা সংক্রমণরোধে পাঁচ উদ্যোগ : সিলেটে লাগামহীনভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কঠোর লকডাউনেও কমছে না আক্রান্ত শনাক্ত। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে পাঁচ উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সিলেট নগরীর সব পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডেকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও।

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- উৎসমুখে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বন্ধে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে সচেতনতা ও টিকাদানে উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণা। আগামী ৭ আগস্ট থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে মাস্ক বিতরণ ও টিকাদানে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

তিনি জানান, আগামী ৭ আগস্ট থেকে ২৭টি ওয়ার্ডে ৮১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে টিকাদান শুরু হবে। এ জন্য ১৬২ জন টিকাকর্মী ও ২৪০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের দুটি ফটোকপি নিয়ে  কেন্দ্রে গেলেই ১৮ ঊর্ধ্ব যে কেউ টিকা দিতে পারবেন। এ ছাড়া ওইদিন থেকে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাস্ক বিতরণ করবে সিসিক। গ্রাম পর্যায়ে রোগী বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবার মান আরও উন্নত করে উপজেলা পর্যায়ে গ্রামের রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়। এতে শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমবে বলে মত দেন উপস্থিত স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।

সভায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় অক্সিজেন সেবা। মেয়র জানান, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় ওসমানী হাসপাতালের নতুন আউটডোর বিল্ডিংয়ে ৪০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলে প্রবাসী ও সিলেটের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে সিটি করপোরেশন অর্থের ব্যবস্থা করবে। সভায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনার চিকিৎসায় অমানবিকভাবে বিল আদায় না করার অনুরোধ জানানো হয়। সভার সিদ্ধান্তগুলো প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী বরাবরে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 মেয়র জানান, সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের প্রতি একাত্মতা পোষণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি তার পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

সভায় সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্যবিভাগ, বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর