রাজশাহী নগরীর হাদির মোড়ের বাসিন্দা গৃহিণী ফাতেমা আক্তার। গত মাসের শেষের দিকে তার শ্বাসকষ্ট আর কাশি দেখা দেয়। রামেক হাসপাতালে শয্যা সংকটের খবর শুনে সিদ্ধান্ত নেন বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণের। সংগ্রহে রাখেন একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। তবে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট তীব্র হওয়ায় মেপে দেখেন; অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তার স্বামী আফজাল হোসেন। মোবাইল ফোনে তিনি সহযোগিতা চান শহীদ জামিল ব্রিগেডের। আফজাল হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সামনের বাড়ির এক কলেজপড়ুয়া ছোটভাইকে জানাতেই সে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে জানায়, এতে ফোন দিয়ে কথা বলতে। আমি ফোন দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে জানালে বলা হয়, ‘আপনি হাসপাতাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিন, আমরা আসছি।’ ‘প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একদল স্বেচ্ছাসেবী হাজির। আমার স্ত্রীর করোনার লক্ষণ ও শ্বাসকষ্ট থাকায় প্রতিবেশীরা কেউই এগিয়ে আসেনি। জামিল ব্রিগেডের সদস্যরা একদিকে যেমন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে এসেছে, অন্যদিকে তারাই বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে কোনো সংকোচ ছাড়াই। এর জন্য একটি টাকাও দিতে হয়নি।’ করোনা আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অক্সিজেনের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনের খাতায় যুক্ত হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।
জরুরি ভিত্তিতে এ দুই সেবা না পেলে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপদ। এমন পরিস্থিতিতে করোনাক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রথমে রাজশাহী নগরী ও পরে জেলায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগের নজির গড়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শহীদ জামিল ব্রিগেড। একটি ফোন পেলেই বিনামূল্যে রোগীর বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে। রোগীকে হাসপাতালে নিতে চালু রেখেছে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স। শুধুমাত্র রাজশাহী শহরে কভিড মোকাবিলায় ৫ জুন ৫০ জন তরুণ-যুবকের সমন্বয়ে শহীদ জামিল ব্রিগেড গঠন করা হয়। মহানগর এলাকায় শুধুমাত্র একটি ফোনকলে মানুষের বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন সদস্যরা। প্রায় প্রতিদিন রাজশাহী নগর ও জেলায় অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স সেবার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে শহীদ জামিল ব্রিগেড। শহীদ জামিল ব্রিগেডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘বর্তমানে শহর ছাড়িয়ে গ্রাম অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের পাশাপাশি জনগণের সেবা এবং মানবিক দায়িত্ব পালন করা উচিত। সে কারণেই আমরা জামিল ব্রিগেড গঠন করেছি।’