মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফোটাল বসুন্ধরা

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফোটাল বসুন্ধরা

করোনা মহামারী সংকটে কর্মহীন-দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও অসহায় ৩ হাজার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে দেশের স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। ৭ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট তিন দিনে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় কালের কণ্ঠের সামাজিক সংগঠন শুভসংঘের সদস্যরা জেলার নয়টি উপজেলার ৩ হাজার মানুষের মধ্যে এ খাদ্যসামগ্রী উপহার পৌঁছে দেন। করোনা মহামারীর মধ্যে কর্মহীন-অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো খাদ্যসামগ্রী পেয়ে যেমন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তেমনি খাদ্য বিতরণে অংশ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রথম দিন শনিবার জেলার কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার ৯০০, দ্বিতীয় দিন রবিবার বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজলার ১ হাজার ২০০ এবং শেষদিন গতকাল সোমবার সদর ও কামারখন্দ উপজেলার ৯০০ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় খাদ্যসামগ্রী। গতকাল সকালে শহরের মনসুর আলী অডিটরিয়ামে খাদ্যসহায়তা বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, করোনা মহামারীতে দেশে চরম সংকট চলছে। সংকট মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্মহীন দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মুখে খাবার তুলে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সব মহৎ কাজের মধ্যে এটি সর্বোত্তম মহৎ কাজ উল্লেখ করে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বসুন্ধরার কার্যক্রমকে অনুসরণ করে অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের অনুরোধ জানান।

বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য উপহার পেয়ে বাস শ্রমিক শরিফ জানান, গত দুই মাস বাস বন্ধ। কাজকর্ম নেই। খুব কষ্টে দিনযাপন করছিলাম। বসুন্ধরার চাল-আটা-ডাল পেয়ে খুব ভালো লাগছে। অন্তত ১০ দিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খেতে পারব। মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে চেয়ারে বসে সম্মানের সঙ্গে বসুন্ধরার সহায়তা পেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে পঙ্গু বাঘা সূত্রধর বলেন, গেল ১৫ বছর আগে বার্জার’স ডিজিজে এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তখন লাঠি ভরে চলাফেরা করতে পারতাম। তার আট বছর পর একই সমস্যায় অন্য পাও কেটে ফেলতে হয়। এখন কৃত্তিম পা নিয়ে লাঠিতে ভর দিয়েই চলি। কাজ করার সামর্থ্য নেই। বয়স্ক বাবাকে নিয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তাটুকু অন্তত ১০ দিন খাবারের চিন্তা থেকে দূরে রাখবে। বাঘা সূত্রধরের মতো আরেক প্রতিবন্ধী দেলোয়ার হোসেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ায় তার দুই হাত কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন তিনিও। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে কহনো ত্রাণ পাই নাই। আল্লাহ তোমাদের হায়াত দিক। বসুন্ধরার জন্য অন্তর থেকে দোয়া করছি।’ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার পারভেজ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল হামিদ মিয়া, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি হেলাল আহমেদ, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মো. ইমরান হোসেন, সদস্য শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন, সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির উপদেষ্টা প্রদীপ সাহা, সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নিত্যরঞ্জন পাল, সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন আলীসহ সুজিত সরকার।

দুপুর ১২টায় জেলার কামারখন্দ উপজেলার হাজী কোরপ আলী সরকারি কলেজ মাঠে সাড়ে ৪০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও করোনা সুরক্ষায় সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, কামারখন্দ উপজেলার মানুষগুলো ক্ষুদ্র কৃষি ও শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। করোনা সংকটের মধ্যে সাড়ে ৪০০ মানুষকে বসুন্ধরা গ্রুপ খাদ্যসহায়তা দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাল। অন্তত ১০ দিন পরিবারগুলো শান্তিতে খেতে পারবে। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি মানবিক কাজে তাদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, সরকারের সহায়তায় আমরা দুস্থদের মাঝে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে এ সহায়তার আওতায় আনতে পারিনি। সংকট মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ দরিদ্রদের পাশে থেকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে করোনা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আশা করছি বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবে।  

খাদ্যসহায়তা পেয়ে তাঁত শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, করোনার মধ্যে তিন মাস কর্মহীন। আমাদের সংসারের অবস্থা ভয়াবহ। এ মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ যে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে তা খুব উপকারে লাগবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি বসুন্ধরার মালিক যেন সবসময় আমাদের মতো দরিদ্রদের পাশে থাকেন। নূর ইসলাম নামের বৃদ্ধ উপকারভোগী বলেন, এর আগে কখনো সাহায্য পাই নাই, এটাই প্রথম পাইলাম। আল্লাহ যেন বসুন্ধরার আরও উন্নতি দেয়। কালের কণ্ঠের শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের খাদ্য উপহার করোনায় কর্মহীনদের হাতে তুলে দিতে কালের কণ্ঠের শুভসংঘ জেলার পর জেলায় ছুটে চলছে। গত তিন দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার নয়টি উপজেলার ৩ হাজার মানুষকে খাদ্য উপহার দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পাবনায় খাদ্য উপহার বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর