শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

এক টানেই জালে ধরা ৮৭ মণ ইলিশ, বিক্রি ২৭ লাখ টাকা

প্রতিদিন ডেস্ক

এক টানেই জালে ধরা ৮৭ মণ ইলিশ, বিক্রি ২৭ লাখ টাকা

চার মাস পর সামুদ্রিক ইলিশে ভরপুর বরিশালের মোকাম। কমেছে দামও। ছবিটি গতকাল পোর্ট রোড ইলিশ মোকাম থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গভীর বঙ্গোপসাগরে একটি জালে এক টানেই ৮৭ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। আর সেই মাছ বিক্রি করা হয়েছে ২৭ লাখ টাকায়। গতকাল  দুপুর ১২টার দিকে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) এফবি সাইফ ২ ট্রলারে ওই মাছ নিয়ে এলে এগুলো কেনেন সেমার্স সাইফ ফিশিং কোম্পানি অ্যান্ড কমিশন এজেন্ট। এক টানে ৮৭ মণ মাছ পেয়ে হতবাক ট্রলারের জেলেরা। এদিকে, দীর্ঘ প্রায় চার মাস পর সাগরের ইলিশে ভরপুর বরিশালের মোকাম। তবে স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর কোনো ইলিশ নেই। সবই সাগরের ইলিশ। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়া ট্রলারগুলো মোকামে ফিরে আসায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বরিশাল মোকামে। পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, শিল্পপতি মোস্তফা ইকবাল হোসেন মানিকের মালিকানা এফবি সাইফ ২ ট্রলারের মাঝি মো. জামাল হোসেন বলেন, সাগরে গিয়ে জাল ফেলে এক টানেই প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ে। ট্রলারের মাছ রাখার জায়গা পূরণ হওয়াতে দ্রুত পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে বৃহস্পতিবার রাতে ফিরে আসে। পরে শুক্রবার সকাল থেকেই মাছ বিক্রি শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় শেষ হয়। ওই মাছ কেনেন সেমার্স সাইফ ফিশিং কোম্পানি অ্যান্ড কমিশন এজেন্ট। এক ট্রলারে এত পরিমাণ মাছ ধরা পড়ায় বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মী এ এস এম জসিম বলেন, আমার এই বয়সে এত বড় ইলিশ এবং একই ট্রলারে এত পরিমাণ মাছ দেখিনি।

একেকটি মাছের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। মেসার্স সাইফ ফিশিং কোম্পানির স¦ত্বাধিকারী পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ইলিশ জেলেদের জালে ধরা না পড়লেও একটি ট্রলারে ৮৭ মণ মাছ নজিরবিহীন এবং তা বিক্রিও হয়েছে ২৭ লাখ টাকায়। আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, প্রায় ৪ মাস পর সাগরের ইলিশে ভরপুর বরিশালের মোকাম। তবে স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর কোনো ইলিশ নেই মোকামে। সবই সাগরের। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়া ট্রলারগুলো মোকামে ফিরে আসায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বরিশাল মোকামে। এতে খুশি জেলে ও মৎস্যজীবীরা। আগামী দিনে সাগরে আরও ইলিশ আহরিত হবে বলে আশা করেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

অভ্যন্তরীণ নদ-নদী থেকে এবং সাগর থেকে সারা বছর কম বেশি ইলিশ আহরিত হয়। তবে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এই তিন মাস ইলিশের প্রধান মৌসুম। গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলো বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঝ পথ থেকেই ফিরে এসেছিল। আবহাওয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়া ট্রলারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়েছে। সমুদ্রে যাওয়ার ১২ থেকে ১৫ দিন পর ট্রলার বোঝাই ইলিশ নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছে জেলেরা। গত বৃহস্পতিবার বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে এসেছে ৬টি মাছ ধরা ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ মণ বিভিন্ন সাইজের ইলিশ। গতকাল ৪টি সামুদ্রিক ট্রলার এসেছে পোর্ট রোড মোকামে। এ ছাড়া পটুয়াখালীর মহিপুর মোকাম থেকেও ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ এসেছে বরিশালে। গতকালও প্রায় ৮০০ মণ ইলিশ এসেছে পোর্ট রোড মোকামে। দুই দিন ধরে সামুদ্রিক ইলিশে সয়লাব পোর্ট রোড মোকাম। ইলিশ বিকিকিনিতে ব্যস্ত আড়তদার-শ্রমিকদের আনন্দে মুখরিত পোর্ট রোড মোকাম।  

সমুদ্রে আশাতীত মাছ পাওয়ায় খুশি জেলেরা। আহরিত মাছ বিক্রি করে আবারও গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়ার কথা বলেন সামুদ্র্রিক জেলে মো. গফুর মল্লিক ও মো. রফিকুল ইসলাম। এভাবে সমুদ্রে মাছ পাওয়া গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটানোর আশা তাদের।

পোর্ট রোডের ইলিশ ব্যবসায়ী কাঞ্চন সাহা বলেন, কেবল ইলিশ মৌসুম শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে অনেক সামুদ্রিক ইলিশ এসেছে। সমুদ্রের ইলিশ গড়পড়তা ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। আগামী দিনে সমুদ্র থেকে আরও ইলিশ আহরিত এবং দাম আরও কমবে বলে আশা করেন তিনি।

ইলিশের আড়তদার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ চার মাস পর বরিশাল মোকামে প্রথম অনেক ইলিশ এসেছে। আগে স্থানীয় বিভিন্ন নদ-নদীর ৪০ থেকে ৫০ মণ ইলিশ আসত মোকামে। গত দুই দিনে প্রায় ২ হাজার মণ ইলিশ এসেছে। সামনের দিনে ইলিশ আহরণ বাড়বে এবং দামও কমবে বলে আশা করেন তারা। সাগরের বিভিন্ন আকারের ইলিশ গড়ে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় নদী-নদী থেকে আহরিত কিছু ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোর্ট রোডের খুচরা মাছ ব্যবসায়ী মো. হারুন।

বরিশাল মৎস্য দফতরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, মৌসুমের শুরুর দিকে জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় কিছুটা চিন্তিত ছিল মৎস্য বিভাগ। দেরিতে হলেও বরিশাল মোকামে ইলিশের খড়া কেটেছে। আগামী দিনগুলোতে সাগরে এবং স্থানীয় নদ-নদীতে আরও ইলিশ আহরিত হবে এবং ইলিশের দামও কমবে বলে আশা করে মৎস্য বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর