সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শেষ বিদায়ের আড়ম্বর প্রস্তুতি

বিশেষ প্রতিনিধি

শেষ বিদায়ের আড়ম্বর প্রস্তুতি

একজন মানুষের শেষ যাত্রাটা যে এতটা আয়োজন করে হতে পারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দাফন সেবা কার্যক্রম দেখতে না গেলে জানাই হতো না। গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে ‘দাফন করসেবা’র আয়োজন করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। কোয়ান্টামের এ দাফন সেবার স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেন সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবী। রাজধানীর কাকরাইলে ওয়াইএমসিএ ভবনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে এ কার্যক্রমে অংশ নেন। কাকরাইলে দাফন ক্যাম্প কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহের জন্য কেউ কাফনের কাপড় কাটছেন, কেউ আতর-সুরমা প্যাকেট করছেন। কেউ বডিব্যাগ প্রস্তুত করছেন, কেউ আবার পিপিই গোছাচ্ছেন। এভাবেই কর্পূর, তুলা, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস প্যাকেটে ভরে প্রস্তুত হচ্ছে একেকটি প্যাকেট। সংঘবদ্ধভাবে হাত ঘুরে ঘুরে সেগুলো চলে যাচ্ছে গোসলখানা বা হাম্মামখানার স্টোরে। দাফন কর্মীরা সেখান থেকে একেকটি প্যাকেট ব্যবহার করেন একেকজন মরদেহের জন্য। এভাবেই হাম্মামের ভিতরে সহজেই সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করতে মরদেহ ও দাফন কর্মীদের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ করসেবার আয়োজন। পাশাপাশি কাপড় কাটাসহ বডিব্যাগ প্রস্তুতির প্রশিক্ষণে অংশ  নেন তারা।

২০২০ সালে করোনার শুরু থেকে গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ৭২০ জনেরও বেশি মরদেহের শেষ যাত্রায় সঙ্গী হয়েছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। এর মধ্যে মুসলিম ৫ হাজার ৪০ জন, সনাতন ৬০৮ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ৩১ জন এবং খ্রিস্টান ধর্মের রয়েছেন ৪১ জন।

রাজধানীর কাকরাইলে কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের ইনচার্জ খন্দকার সজিবুল ইসলাম জানান, জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানাই। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে বাঙালি হিসেবে জাতির যে  কোনো দুর্যোগে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাকর্মীরা প্রস্তুত। শোক দিবস উপলক্ষে ১ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাকর্মী এসেছেন। কোয়ান্টাম পরিবারের বিভিন্ন পেশার এই সদস্যরা স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণে সফল করেন সারা দিনের এ করসেবা।

তিনি বলেন, একজন মানুষ সারা জীবন তার সমাজ, সংসারের জন্য নিজেকে সমর্পণ করেন। তার শেষ বিদায়টা অবশ্যই সম্মানজনক হওয়া উচিত। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। গত বছর এপ্রিল থেকেই করোনা বা করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তিদের শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছে কোয়ান্টাম। স্বপরিকল্পনা, স্বঅর্থায়ন আর স্বেচ্ছাসেবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে এ দাফন  সেবা। সব মিলিয়ে রাজধানীতে দাফন সেবায় সরাসরি জড়িত রয়েছেন দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ শরও বেশি। মমতার পরশে মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রতিষ্ঠানটির এই  স্বেচ্ছাকর্মীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী চলছে করোনাকালীন দাফন কার্যক্রম। পাশাপাশি সাধারণ মরদেহ গোসলেরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন কর্মীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর