বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতে চলবে মেট্রোরেল

সরাসরি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ যাবে

জিন্নাতুন নূর

স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হলে বৈদ্যুতিক রেল যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক মেট্রো চালানো শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরাসরি গ্রিড থেকে মেট্রোরেলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কোনো আশঙ্কা থাকছে না। আপাতত রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালাতে প্রয়োজন হচ্ছে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এরই মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ দিকে ভায়াডাক্টের (যার ওপর মেট্রোরেল চলবে) ওপর ট্রেন ওঠাতে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎও প্রস্তুত আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রো চালু হলে গণপরিবহনে ডিজেলের ব্যবহার কমবে, কমবে কার্বন নিঃসরণ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরাসরি গ্রিডলাইন থেকে সরবরাহের মাধ্যমে এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ যাবে। আর এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। মেট্রোতে গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দিয়াবাড়ীতে ১৩২ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরে মতিঝিলে একই ক্ষমতার আরেকটি উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে মেট্রোরেলের পিলারের ওপর থাকা স্প্যানে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো হয়েছে। মেট্রোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন করছে জাপানের মারুবেনি করপোরেশন ও ভারতের এল অ্যান্ড টি (লারেসেন অ্যান্ড টারবো)। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো চালাতে ৮০ মেগাওয়াট এবং পরে মতিঝিল থেকে চালু করতে আরও ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মেট্রোর কোথায় কোথায় সাবস্টেশন তৈরি করতে হবে তা বলে দিয়েছে। এর মধ্যে টঙ্গীতে আমরা এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী সাবস্টেশন তৈরি করে দিয়েছি। এ সাবস্টেশনের ক্ষমতা ১৩২ কেভি। আমাদের অংশের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)-এর কিছু কাজ আছে।

যত দূর জানি সে কাজও শেষ। বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ করবে ডিস্ট্রিবিউশন এনটিটি। আমাদের সাবস্টেশন আগে থেকেই তৈরি করা আছে এখন সে জায়গা থেকে মেট্রোরেলের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা দেওয়া হবে। কমলাপুরের দিকে এখনো যেহেতু কাজ শুরু হয়নি ফলে সেখানে এখনো বিদ্যুতের চাহিদা নেই। তবে মেট্রোরেল চালাতে যে পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে তার ব্যবস্থা করতে আমাদের সমস্যা হবে না। বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে টঙ্গীর দিকে ডেসকো ও মতিঝিলের দিকে দায়িত্বে থাকবে ডিপিডিসি।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ইলেকট্রিক্যাল) মোহা. আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিজিসিবির ১৩২ কেভি লাইন যার ক্ষমতা ৮০ মেগাওয়াট এ বিদ্যুৎ দিয়েই চলবে মেট্রোরেল। এর কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। মেট্রোরেল চালানোর জন্য বিদ্যুৎসংক্রান্ত যে সনদ পাওয়ার কথা তা এরই মধ্যে পেয়ে গেছি। চলতি মাসের শেষের দিকে ভায়াডাক্টের ওপর ট্রেন ওঠাতে যাচ্ছি। এজন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎও প্রস্তুত আছে। যেহেতু বৈদ্যুতিক বিষয় এজন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মতিঝিলে আরেকটি সাবস্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের মোট ২৪ সেট ট্রেন চলবে। কিন্তু ২৪ সেট ট্রেন একসঙ্গে চালানো সম্ভব নয়। বড়জোর ১৬ সেট ট্রেন একসঙ্গে চলবে। মেট্রোরেলে অপারেশনের জন্য আটটি সেট সব সময় স্ট্যান্ডবাই রাখতে হয়। আপাতত ১৬ সেটের মেট্রোরেল চালানোর জন্য ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যথেষ্ট। আর পিজিসিবিতে যেহেতু সচরাচর বিদ্যুৎ যায় না এজন্য মেট্রোরেল চালাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ কারণে এ প্রকল্পের জন্য পিজিসিবি থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার কাজ ওরা নিজেরাই করছে। আমরা শুধু গ্রিড থেকে এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেব। আমরা কমলাপুর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কাজ করব।

সর্বশেষ খবর