বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশি মাছের পেটে মিলেছে ক্ষতিকর প্লাস্টিক কণা

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের নদ-নদীগুলো থেকে পাওয়া মাছ নিয়ে দুঃসংবাদ পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ মাছের পেটেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের কণা- যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। সূত্র : বিবিসি। দেশি মাছের ওপর এ গবেষণাটি চালিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহম্মদ তারেক, সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা পারভীন এবং শিক্ষার্থী সুমাইয়া জান্নাত। বাজারে পাওয়া যায় এমন দেশি মাছের ওপর এই গবেষণা করে জানা গেছে, ১৫ প্রজাতির মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি রয়েছে। যেসব প্লাস্টিক পলিমার পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে হাই ডেনসিটি পলিথিলিন, পলিপ্রোপাইলিন, পলিথিলিন কপোলাইমার এবং ইথিলিন ভিনাইল এসিটেট। গবেষণা রিপোর্টটি সম্প্রতি পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক জর্নাল সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ফাহমিদা পারভীন জানান, ১৫ প্রজাতির মাছের পরিপাকতন্ত্রে তারা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার সন্ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা মোট ১৮ প্রজাতির ৪৮টি মাছ নিয়ে পরীক্ষা করি।

তার মধ্যে ৩৭টি মাছে অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ মাছেই মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। যেসব মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে রুই, তেলাপিয়া, কই, কালিবাউশ, বেলে, টেংরা, কমন কার্প, পাবদা, পুঁটি, শিং, টাটকিনি, বাইন, বাটা, মেনি ও বাছা। তার মধ্যে টেংরা, টাটকিনি ও মেনি মাছে বেশি পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। ঢাকার কাছে সাভার ও আশুলিয়ার দুটি স্থানীয় বাজার থেকে এসব মাছ কেনা হয়েছে- যা দেশের নদী-নালা, খাল বিল, পুকুর ও জলাশয়ের স্বাদু পানিতে পাওয়া যায়। সাভারের বাজারে যেসব মাছ পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ নদী কিম্বা আশপাশের খাল থেকে ধরা হয়।

গবেষকরা আরও  বলেছেন, শুধু বড় মাছেই নয়, ছোট ছোট মাছেও যে প্লাস্টিকের কণা রয়েছে- এই গবেষণা থেকে তাও প্রমাণিত হয়েছে। ফাহমিদা পারভীন বলেন, ‘একেক মাছ পানির একেক স্তরে বাস করে। মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো তাদের ভরের কারণে ধীরে ধীরে নিচের তলানিতে গিয়ে জমা হয়। ফলে পানির নিচের স্তরের মাছগুলো তলানিতে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের কণাগুলো খায়।’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পানিতে ফেলে দিলে সেসব ফটোকেমিক্যালি ও বায়োলজিক্যালি ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। এ ছাড়াও টুথপেস্ট, ফেসওয়াশ ইত্যাদিতে ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো আসলে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের বীজ। এগুলো পানিতে চলে যায় এবং মাছ এগুলোকে খাবারের সঙ্গে ভুল করে খেয়ে ফেলে। এভাবে মাছের শরীরে প্লাস্টিক চলে যায়।

বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা যখন মাছের পেটে চলে যায়, তখন তাদের মধ্যেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। প্লাস্টিকের কণা যদি মানুষের শরীরে না-ও যায়, ওই প্লাস্টিক থেকে যেসব বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হচ্ছে, সেগুলো মাছের দেহে জমা হয়। এসব বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের শরীরে যাচ্ছে এবং এর ফলে স্তন ক্যান্সারসহ নানা ধরনের অসুখ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর