রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হোম টেক্সে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সম্ভাবনা

ব্যবসা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কোটির, দেশি বাজার ১০ হাজার কোটি টাকার

রুহুল আমিন রাসেল

ঘরের ভিতর প্রয়োজনীয় কাজে কিংবা শোভাবর্ধনে ব্যবহার্য বস্ত্রপণ্য বা হোম টেক্সটাইল খাতে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে বাংলাদেশ। এ খাতের দেশি বাজার ১০ হাজার কোটি টাকার। আবার প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ৪৭ দেশে রপ্তানির পরিমাণও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। দেশে-বিদেশে সমান চাহিদা থাকা বাংলাদেশি হোম টেক্সটাইল পণ্যে ২০২৭ সালে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি সম্ভাবনা দেখছে বিএইচটিএমইএ ও বিটিটিএলএমইএ। এ প্রসঙ্গে হোম টেক্সটাইল শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হোম টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিএইচটিএমইএর সভাপতি মো. হারুন-অর-রশীদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ শিল্পে ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপের বাজারে সামনে অনেক রপ্তানি বাড়বে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে হোম টেক্সটাইল শিল্পে বিনিয়োগে নজর দিতে হবে। লাগবে সরকারি নীতিসহায়তাও।’

এ প্রসঙ্গে হোম টেক্সটাইল খাতের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিটিটিএলএমইএর সভাপতি এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘২০২৭ সালে বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বেরিয়ে যাবে তখন আমাদের রপ্তানি ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানো সম্ভব। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছানো হোম টেক্সটাইল খাতের দেশি বাজার ১০ হাজার কোটি টাকার। আবার রপ্তানিও হচ্ছে ৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিতে এখন বড় বাধা দেশি বাজারে সুতার উচ্চমূল্য। বিশ্বে সুতার দাম কম থাকলেও বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। ফলে হুমকির মুখে রপ্তানি। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ ও নীতিসহায়তা চাই।’

এদিকে হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়েল রপ্তানি সমস্যা সমাধানে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর চেয়ারম্যানকে ১৬ আগস্ট পৃথক চিঠি দিয়েছে বিটিটিএলএমইএ। এসব পত্রে বলা হয়- বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে হোম টেক্সটাইলে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ফলে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। সহায়ক পরিবেশ পেলে হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়েল অচিরেই কয়েক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের খাতে পরিণত হবে। বর্তমানে এ খাতে পর্যাপ্ত রপ্তানি আদেশ রয়েছে। স্থানীয় সুতার ওপর নির্ভরশীল এ খাত চাহিদা অনুযায়ী সুতা পাচ্ছে না। মিলগুলো সঠিক সময়ে সুতা সরবরাহ করতে পারছে না। আবার ভারত, পকিস্তান ও অন্যান্য সুতা উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় স্থানীয় বাজারে সুতার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। চিঠিতে বলা হয়- উচ্চমানের টাওয়েল উৎপাদনের জন্য ৬ থেকে ২০ কাউন্টের রিং সুতার প্রয়োজন। চাহিদার তুলনায় এসব সুতার উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক কম। স্থানীয় মিলগুলো বড় ক্রয়াদেশ ও ভালো দর ছাড়া টাওয়েলের উপযোগী রিং সুতা উৎপাদন ও বিক্রয় করতে চায় না। ফলে হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়েল খাতের রপ্তানি ধরে রাখতে সুতা আমদানির কোনো বিকল্প নেই। তাই এ খাতের উৎপাদন কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন রাখতে ৬ থেকে ২০ কাউন্টের সুতা রেয়াতি হারে শুল্কায়নের মাধ্যমে আমদানির অনুমোদন দিতে হবে। সব স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানি নিশ্চিত করতে হবে।

জানা গেছে, বিশ্বের ৪৭ দেশে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে প্রধান বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ হোম টেক্সটাইল পণ্য বিক্রি হয় আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোয়। বিশ্বখ্যাত ক্যারফোর, ওয়ালমার্ট, আইকিয়া, আলদি এইচঅ্যান্ডএস, মরিস পিলিপস, হ্যাসা প্রভৃতি বড় ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইলের বড় ক্রেতা। এ ছাড়া ছোট ছোট বহু ক্রেতা এখন বাংলাদেশের আমদানিকারক। হোম টেক্সটাইল খাতে ১৪৭টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও বর্তমানে রপ্তানি করছে ৬০টি। বিশাল সম্ভাবনা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না।

নীতিসহায়তা দিয়ে খাতটিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা গেলে দেশের পণ্য রপ্তানি আয় অনেকখানি বাড়ানো সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর