রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা

১৯৮৮ সাল থেকে সংবাদপত্র বিক্রি করেন শাহ আলম। মা-বাবা আর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এত দিন ভালোভাবে সংসার চললেও করোনার পর থেকে টানাপোড়েন বেড়েছে। আগে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় করলেও এখন তা নেমেছে ২০০ টাকায়। তাই পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। তাদের এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে শাহ আলম বলেন, ‘করোনার জন্য আমরা খুব সংকীর্ণ জীবন কাটাচ্ছি। এই সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুব উপকার হলো। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিছুদিন খেয়ে বাঁচতে পারব। বিপদে আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের ধন্যবাদ।’ সেলিম রেজা নামের আরেক হকার বলেন, ‘আগের মতো পত্রিকা বিক্রি হয় না। করোনার জন্য মানুষ নিতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলও বন্ধ। তাই সেখানেও বিক্রি করতে পারি না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি। আজকে বসুন্ধরা থেকে যে সাহায্য পাইলাম, এটাই অনেক উপকার হইল। অসময়ে তারা আমদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেখে ভালো লাগছে।’ তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে খাদ্য সহায়তা পেয়ে আবদুল ওয়াহাব নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘আমরা ঘরে স্বামী-স্ত্রী থাকি। খ্যাত-খামারত কাম করে খাই। খুব কষ্টে আছি। কোনোরকম সংসার চলছে। একটা ছেলে আছে তারই সংসার চলে না, আমারেও দিতে পারে না। তোমাদের চাল পেয়ে শান্তি পাইছি। ১৫ দিন খাইতে পারব। আল্লাহর কাছে বসুন্ধরা মালিকের দীর্ঘ জীবন কামনা করি।’ শনিবার তাদের মতো রাজশাহী জেলার দুটি উপজেলায় ও মহানগরীতে ৯০০ হকার, দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় প্রত্যেককে ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি ডাল ও ৩ কেজি আটা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ৩০০, তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ৩০০ ও নগরীর নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় ৩০০ পরিবারকে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন শুভসংঘের সদস্যরা। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলেন রুমেলা বেগম। বয়স ৭৫ হয়েছে। ৫০ বছর আগে তাকে ছেড়ে চলে যান স্বামী। এরপর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে রুমেলা বলেন, ‘আমার এক পাগল ব্যাটা ছাড়া কেউ নাই। চাইয়্যা-চিন্তে খাই। কেউ দেয়, কেউ দেয় না। তা দিয়া কোনোরকম খাই। তোমাদের সাহায্য পাইয়্যা ভালো লাগছে। আইজ রোজা আছি মহরমের। তোমাদের জন্য দোয়া করব।’ নাবিয়া খাতুন নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘মাইনষেরতে ভিক্ষা কইরা খাই। আমারে কেউ খাইতে দিলে তার জন্য দোয়া করি। আইজ বসুন্ধরা খাবার দিল, আমার ধনেরা বাঁইচা থাক। কামে বরকত দেক। কামে বরকত না দিলে তো আমি পামু না।’ নগর ভবনে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘করোনাকালে মানুষের যে দুঃখ-দুর্দশা চলছে, এটি নিরসনের জন্য যে যার মতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান দেশের প্রতিটি উপজেলায় ৩০০ পরিবারকে উপহার দিচ্ছেন। এই মহতী উদ্যোগের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। মানুষের অসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিশ্চয় তিনি সবার দোয়া পাবেন। আমি মনে করি যাদের সামর্থ্য আছে, তারা সবাই এভাবে সরকারের পাশাপাশি জনগণের পাশে যদি এগিয়ে আসেন তাহলে তাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।’ গোদাগাড়ীতে উপস্থিত হয়ে মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল করিম শিবলী বলেন, ‘করোনার এই প্যানডেমিক সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষের পাশে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা দেশব্যাপী অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। আমি দেখেছি তারা রংপুর বিভাগের সব জেলায় ২৪ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। রাজশাহী বিভাগেও ২৪ হাজার পরিবারকে দিচ্ছে। দেশে অনেক বিত্তবান আছেন। কিন্তু সবাই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন না। বসুন্ধরা গ্রুপ দিয়েছে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য আপনারা খাস দিলে দোয়া করবেন। তারা যেন আবারও আপনাদের সহায়তা করতে পারে।’ জহুরা বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘আমি একলাই থাকি একলাই খাই। চেয়ারম্যানের বাড়িতে কাম করি। কাম না করলে কেউ দেয় না। তোমরা আইজ দিলা। এইটা দিয়া ২০ দিন চলবে। আল্লাহ আরও বরকত দিক। আমরা আরও খাইতে পাব।’

এ সময় উপস্থিত হয়ে চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাহেবের সুনাম দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি। করোনাকালে অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। এর জন্য তাঁকে মন থেকে দোয়া করি ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা যেন ভবিষ্যতেও এভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন সে জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’ এদিন খাদ্যসামগ্রী বিতরণে সব কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী শাহেদ, কালের কণ্ঠের ব্যুরোপ্রধান রফিকুল ইসলাম, বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপনডেন্ট শরীফ। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার মধ্য দিয়ে জেলার ৩ হাজার পরিবারে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়। শুক্রবার হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ৪০০ ও মহারাজপুর এসমা খাতুন চৌধুরী মহাবিদ্যালয় মাঠে ৪০০ পরিবারে এই সহায়তা দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জিল্লার রহমান বলেন, ‘আজকে বসুন্ধরা গ্রুপ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনাদের ১০-১২ দিনের খাবার দিয়েছে। আমরা সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করব। তাঁরা যেন আরও বেশি বেশি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। করোনার এই দুর্দিনে বসুন্ধরা গ্রুপ সারা দেশের অসহায় মানুষকেই কিছুদিনের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। তাই আমি বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।’ সদর পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থানে যারা বড় সুযোগ করে দিচ্ছে, অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে, তাদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ অন্যতম। আজ দেশের প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিনেও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে তাঁরা। তাই আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁদের এই মানবিক কাজ অব্যাহত থাকবে সেই প্রত্যাশা করি। আপনারা যারা আজ খাদ্যসামগ্রী পেলেন, সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করবেন। আর করোনা মহামারীর সময়ে আপনারা সুরক্ষিত থাকতে সবাই মাস্ক পরবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর