সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল দিশাহারা মানুষ

পাঁচ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ভাঙন থামছে না তিস্তা-যমুনা পাড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল দিশাহারা মানুষ

দেশের পাঁচ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদীতে ৫৮ পয়েন্টে পানি বেড়েছে; কমেছে ৪৫ পয়েন্টে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ ও ধলেশ্বরীর এলাসিন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা, যমুনা, ধরলা, আত্রাই ও গড়াই নদীর পানি। গঙ্গা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে।

এদিকে যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে বসতভিটাসহ নিম্নাঞ্চল। দেখা দিয়েছে ভাঙন। কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে ধরলা নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ সবজি খেত। রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। 

ভাঙনে দিশাহারা যমুনা পাড়ের মানুষ : যমুনা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। তলিয়ে যাচ্ছে বসতভিটাসহ নিম্নাঞ্চল। যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে শুরু হয়েছে ভাঙন। গত দুই দিনে চৌহালী-এনায়েতপুর ও কাজিপুরের চরাঞ্চলে ভাঙনে অন্তত অর্ধশতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ও বন্যায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে যমুনা তীরের মানুষ। বর্তমানে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৩.২৯ সে.মি লেভেলে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল কাজিপুর উপজেলা চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়ন, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া, চরবিনানুই, চর ছলিমাবাদ গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে কয়েক শতাধিক হেক্টর ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর বসবাস করছে।

ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপরে : উজানের ঢলের পানিতে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে ধরলা নদীর অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলগুলো। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার রোপা আমন খেতসহ বিভিন্ন সবজি খেত। জেলার নদনদীর চর-দ্বীপ চরের নিচু এলাকার প্রায় ১০টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক চর ও নিচু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা রাস্তা ও গ্রামীণ সড়ক। কোথাও কোথাও নিচু জমির সদ্য বেড়ে ওঠা আমন  ধানখেতে পানি ঢুকে পড়ায় কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। নতুন করে বন্যা হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ।

ভাঙন থামছে না তিস্তাপাড়ে : তিস্তা নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র  ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে বসতভিটার পাশাপাশি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এদিকে এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী থাকা পরিবারগুলোর মাঝে চলছে হাহাকার অবস্থা। বন্যার্ত মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। জেলা প্রশাসক আবু জাফর যদিও জানিয়েছেন, বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত।

সাত দিন থেকে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পানিবন্দী পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল।

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে : উজানের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যার পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। রবিবার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। যা গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।

রাজবাড়ীতে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ : রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা উপজেলার প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ।

সর্বশেষ খবর