বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ছয় নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের কয়েক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও ছয় নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বন্যার পাশাপাশি বাড়ছে নদী ভাঙনও। তলিয়ে যাচ্ছে বসতভিটাসহ নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে বন্যায় প্রায় ১৫টি এলাকা পানির নিচে রয়েছে।

এদিকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গড়াই, আত্রাই ও ধলেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদীর ৬৬ পয়েন্টে পানি বেড়েছে; কমেছে ৩৯ পয়েন্টে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ ও মথুরা পয়েন্টে, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে এবং ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

পানি আবারও বিপৎসীমার কাছাকাছি : রংপুর অঞ্চলে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আবার বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে আবারও বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। এর আগে গত দুই সপ্তাহে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজারের বেশি পরিবার। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয়েছে ৫২ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার, কাউনিয়া পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, কুড়িগ্রামের ধরলা পয়েন্টে ২৬ দশমিক ৫৪  ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি প্রবাহিত হয়েছে ২৩ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটারে। কয়েকদিন আগে এসব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে  প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহে  পাঁচ জেলায় কমপক্ষে ১ হাজারের বেশি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

পদ্মা-মহানন্দায় পানি কমছে : রাজশাহীতে পদ্মায় প্রতিদিনই পানি কমছে। তবে ধীরগতিতে। ২২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা থেকে পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে পানির স্তর ছিল ১৭.৪৭ মিটার। বুধবার বিকাল ৩টায় ছিল ১৭.৩৩ মিটার। রাজশাহীতে বিপৎসীমা ১৮.৫০ মিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দায় ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার ও পদ্মায় ২৩ সেন্টিমিটার পানির স্তর কমেছে। মঙ্গলবার পদ্মায় পানির স্তর ছিল ২১.৯৫ মিটার। বুধবার তা কমে হয় ২১.৭২ মিটার। মহানন্দায় ছিল ২০.৩১ মিটার, বুধবার কমে হয় ২০.২৭ মিটার।

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ঢলে বন্যা : খাগড়াছড়ি পৌর শহরে চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ১৫টি এলাকা এখন পানির নিচে। এলাকাগুলো হলো- মুসলিমপাড়া, শব্দ মিয়াপাড়া, পুরাতন জিপ স্টেশন, পৌর সবজি বাজার (নিচের বাজার), উত্তর গঞ্জপাড়া, দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, ফুট বিল, কালাডেবা, গোলাবাড়ি হেডম্যানপাড়া, মহাজনপাড়া। এ ছাড়া তিনটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কগুলো হলো গঞ্জপাড়া সড়ক, বটতলী সড়ক, পৌর সবজি বাজার সড়ক। এ সড়কগুলোয় যোগাযোগ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়ির সারি : পদ্মা নদীতে এখন তীব্র স্রোত। ফলে এমনিতেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে যান্ত্রিক সমস্যায় পড়ছে পুরনো ফেরিগুলো। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চারটি ফেরি পড়ে আছে ভাসমান কারখানায়। এতে ঢাকাগামী গাড়ির চাপ বেড়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ওদিকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানবাহনের লম্বা সারি পড়ে যায় দৌলতদিয়ায়।

আমনের জমিতে বন্যার পানি, চিন্তায় কৃষক : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মহেড়া ইউনিয়নের গ্রামনাহালী গ্রামের আবদুর রহমান এবার ৪২ শতক জমিতে আমন রোপণ করেছিলেন। হঠাৎ তার জমিতে বন্যার পানি ঢুকেছে।

তলিয়ে গেছে ধান গাছ। পানির কারণে গাছের নিচ থেকে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার চিন্তায় চার দিন ধরে হতাশাগ্রস্ত তিনি। তার মতো গ্রামটির অন্তত ৫০ একর জমিতে রোপা আমন ধানের চারা লাগিয়েছিলেন কৃষকরা, যা সম্পূর্ণ এখন পানির নিচে।

মির্জাপুরের কদিমধল্যা-ছাওয়ালী-বাসাইল সড়কের পূর্ব পাশে ভাতকুড়া ও আদাবাড়ী এলাকার জমিগুলো পানিতে ডুবে গেছে। চলতি ভরা বর্ষা মৌসুমে মাত্র ১৫ দিন আগেও ওই সব এলাকায় আবাদি জমিতে পানি না আসায় কৃষকরা চিন্তিত ছিলেন। কারণ, আবাদি জমিতে বর্ষা মৌসুমে পানি না এলে জমির উর্বরতা কমে। ওই সময় বাড়তি লাভের আশায় তারা জমিতে রোপা আমন লাগান। জানা গেছে, মির্জাপুরের প্রায় ৯ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। পানি ১০-১২ দিনের মধ্যে সরে গেলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর