শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে সিলেট বিএনপি

স্বেচ্ছাসেবক দলের উপজেলা ও পৌর কমিটির পদত্যাগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা ও মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সিলেট বিএনপিতে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলেছে তা কিছুতেই নিভছে না। বরং সময়ের সঙ্গে সে আগুনের উত্তাপ যেন বাড়ছে। সদ্যঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের অবমূল্যায়ন ও অপমানের অভিযোগ এনে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর শাখার সাবেক প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান। এর পরই গৃহদাহে পুড়তে থাকে সিলেট বিএনপি। শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক। সর্বশেষ বুধবার স্বেচ্ছাসেবক দলের নয় উপজেলা ও তিন পৌর কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক একযোগে পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া আগামীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের গণপদত্যাগের পাশাপাশি বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী পদত্যাগ করতে পারেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেক পুরনো। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির আহমদ এবং অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক ও কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান। এ কোন্দলের জেরে স্থবির রয়েছে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম।

 এ ছাড়া যখনই অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি হয় তখন উভয় গ্রুপের নেতারা নিজেদের বলয়ে নেতৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। জেলা ও মহানগর ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটিতে উভয় গ্রুপ কেন্দ্রে লবিং করলেও শেষ পর্যন্ত প্রভাব খাটিয়ে নিজের অনুসারীদের শীর্ষপদে পদায়ন করেন খন্দকার মুক্তাদির। জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিতে নিজেদের অনুসারীদের পদায়ন করতে না পেরে ক্ষোভে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আরিফুল হক চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরীয়ার হোসেন চৌধুরী ও শামসুজ্জামান জামান। ওই সময় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু ১৭ আগস্ট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণার পর সে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। পরদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগের সঙ্গে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান জামান। এরপর ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির ১০ নেতা। ২৩ আগস্ট পদত্যাগের পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেন মহানগর তাঁতী দল সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গফ্ফার। এর দুই দিনের মাথায় গতকাল দুটি ছাড়া বাকি সব উপজেলা ও তিন পৌরসভা কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়ে এ সিরিজ পদত্যাগে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সিলেট বিএনপি।

এদিকে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন ইউনিয়ন/ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েক শ নেতা-কর্মী পদত্যাগ করবেন। এরপর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলেরও শতাধিক নেতা-কর্মী পদত্যাগ করতে পারেন। এ নিয়ে মুক্তাদিরবিরোধী বলয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

পদত্যাগ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘শামসুজ্জামান জামান সিলেটের রাজপথে বিএনপির বড় শক্তি ছিলেন। জীবন বাজি রেখে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি দেওয়ার নামে তাকে ও দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অপমান করা হয়েছে। কিছু চাটুকার মিলে দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের কারণে জামান যে পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন সে পথ হয়তো বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অনেককেই অনুসরণ করতে হবে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, ‘অনেক সময় হয়তো ত্যাগীরা মূল্যায়িত হন না। কিন্তু দলের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে আজ হোক আর কাল হোক কাজের মূল্যায়ণ হবেই। আন্দোলন সংগ্রামে জামানের অনেক অবদান আছে। কিন্তু দলের বিরুদ্ধে সে যেভাবে বিতর্কিত কথা বলেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। অভিমান করে তার দলত্যাগ উচিত হয়নি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জামান তার ক্ষোভ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কতিপয় নেতা বারবার কেন্দ্রকে ভুল তথ্য দিয়ে দলের ক্ষতি করছেন। যখন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দলে অবমূল্যায়িত হন তখন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর