সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পাবলিক প্লেসে অবাধে চলছে ধূমপান

বাস, ট্রেন, লঞ্চে ধূমপানরোধে দরকার পুলিশকে সরাসরি জরিমানার ক্ষমতা

জিন্নাতুন নূর

পাবলিক প্লেসে অবাধে চলছে ধূমপান

বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাক সেবনের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এর কারণে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আরও লাখ লাখ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু  পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে অবাধে চলছে ধূমপান। বাস, লেগুনা, লঞ্চ এবং ট্রেন যাত্রীসহ এসব পরিবহনের চালক ও সংশ্লিষ্টদের প্রায়ই প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখা যায়। এমনকি বিধিনিষেধ থাকার পরও হাসপাতাল, বাজার, বিনোদন কেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে তামাকজাতপণ্য। এসব স্থানে অবাধে চলছে ধূমপান। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশকে সরাসরি জরিমানার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে পুলিশকে এ ক্ষমতা দেওয়া হলে তামাক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফলতা আসবে বলে তারা মনে করেন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ এবং সংশোধিত-২০১৩ অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ। বর্তমান আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করলে জরিমানা ৩০০ টাকা। আর পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত রাখতে না পারলে মালিক বা ব্যবস্থাপকদের জরিমানা হবে ৫০০ টাকা। পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন ধূমপানমুক্ত এলাকার সাইন দেওয়া না থাকলে জরিমানা হবে ১ হাজার টাকা। কিন্তু আইন থাকলেও নজরদারি না থাকায় পাবলিক প্লেসে ধূমপান করার বিষয়ে সাধারণের মধ্যে খুব একটা সচেনতনতা  কাজ করে না। ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিটিস অব সোসাইটি (ডাস) পরিচালিত ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী ৩৮৬ জন নাগরিকের মধ্যে ৫২ শতাংশ গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের কারণে শাস্তির বিধান থাকলেও ৮৪ শতাংশ যাত্রীকে কখনো মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন হতে দেখা যায়নি। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশের ট্রেন কম্পার্টমেন্ট ও গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আইনের দুর্বল প্রয়োগের জন্য সেখানে অহরহ ধূমপান করছেন ধূমপায়ীরা। ওয়ার্কিং ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের তিনটি জেলা ও তিনটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৪৯ শতাংশ তামাকজাত পণ্যের বিক্রয়স্থল বাস-সিএনজি স্ট্যান্ডের আশপাশে। অফিস-আদালতের আশপাশে ৬ শতাংশ দোকান। এ ছাড়া হাটবাজার ও আশপাশে ৪৮ শতাংশ, হাসপাতাল, ক্লিনিকের পাশে ১৯ শতাংশ, বিনোদন কেন্দ্রের আশপাশে ৯ শতাংশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ১৬ শতাংশ তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র লক্ষ্য করা যায়।

২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এশিয়ান স্পিকার্স সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন। সে ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার রোডম্যাপের খসড়াও তৈরি করা হয়। খসড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পরোক্ষভাবে ধূমপান ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলে ৫, কর্মক্ষেত্রে ২৫, পাবলিক পরিবহনে ২০, সরকারি অফিসে ১০, রেস্টেুরেন্টে ৩০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।এমনকি সব ধারায় জরিমানা বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের উপদেষ্টা এবং পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তামাক থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করি তার থেকে বেশি অর্থ তামাকের কারণে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে ব্যয় হয়। জনসম্মুখে ধূমপান রোধে মিডিয়ার প্রচারণা, আইনের বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর