শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

অন্তহীন দুর্ভোগে চট্টগ্রাম শহর

সেবা সংস্থার সমন্বয় নেই, সভাও নেই

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

২০১৬ সালের ২৭ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দফতরসমূহের মধ্যে সমন্বয়’ করার জন্য একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্র জারির পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ওই বছরের ৩ আগস্ট এবং ২০১৭ সালের ২৩ মে দুটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সভায় সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ২৮ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় সভার পর থেকে আর কোনো সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এখন সমন্বয় সভা নেই, সমন্বয়ও নেই। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো যে যার মতো করে সমন্বয়হীনভাবে উন্নয়ন কাজ করছে। ফলে নগরবাসীর বাড়ছে ভোগান্তি।

জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে গত ২৬ জুন সব পক্ষকে নিয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান এবং সিটি মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে তদারকি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রতি মাসে প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। তবুও দৃশ্যমান হয় না সমন্বয়। নগরে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ২৮টি সেবা সংস্থা কাজ করে থাকে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চসিক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পানি উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাসসহ আরও কিছু সংস্থা। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সংকট তৈরি হয়। প্রধান দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে জলাবদ্ধতায় নালা-নর্দমা ও সড়ক একাকার হয়ে যায়।

গত ৩০ জুন নগরের ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা খালে পড়ে চালকসহ দুজন নিহত হন। গত ১৯ জুন নগরের চান্দগাঁও বি ব্লক এলাকায় অটোরিকশা নালায় পড়ে গেলে তিন নারী গুরুতর আহত হন। গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর নালায় পড়ে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ।

চসিকের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে যে সমন্বয় সভার কথা বলা হচ্ছে, সেটা দিয়ে সমন্বয় হয় না। এখানে আইনেই ত্রুটি আছে। বলা আছে, সেবা সংস্থার প্রধান বা প্রতিনিধির কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিনিধি পাঠানোর প্রবণতা। কিন্তু যিনি আসবেন তিনি সভায় গুরুত্বপূর্ণ কথা বা সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তাহলে সমন্বয়টা কাকে দিয়ে হবে। সংস্থার প্রধান সভায় না এলে সমন্বয়টা পূর্ণাঙ্গ হয় না।

চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করি। এরই মধ্যে সিডিএর সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। তবে সমন্বয়হীন কাজ চললে উন্নয়নের সুফল মিলবে না। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলছে। তবুও কমছে না জলাবদ্ধতা। এটিও সমন্বয়হীনতার ফল। তিনি বলেন, নালা-নর্দমা, খালে পড়ে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত দুুঃখজনক। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় নালার ওপর থাকা স্লাবগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। বেশির ভাগ খালের পাশের পুরনো প্রতিরোধক দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ছোট ছোট নালা-নর্দমা পরিষ্কার করে চসিক। কিন্তু তারা হয়তো এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় নতুন নালা নির্মাণের কথা ২৭ কিলোমিটার। কিন্তু আমরা করেছি ৫৪ কিলোমিটার। পানি দ্রুত নামার প্রয়োজনে বেশি নালা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নালাগুলো দেখভালের দায়িত্ব চসিকের। এটি তাদের রুটিন কাজ।

জানা যায়, বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নগর উন্নয়নে তিন সংস্থা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় পাঁচ ফুট প্রস্থের নালা-ড্রেন সংস্কার-পরিষ্কার করার কথা।

এর ছোট ড্রেন-নালা পরিষ্কার করবে চসিক। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে নালা ড্রেন হয়ে ওঠে বর্জ্যরে ভাগাড়। তাছাড়া ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চসিক। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি পাস হলেও এখনো এটি ভূমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে। ফলে বৃষ্টি হলেই ডুবছে নগর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর