মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জয়ের ধারাবাহিকতা চায় আওয়ামী লীগ, পুনরুদ্ধারে মরিয়া জাপা

সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আর মাত্র তিন দিন বাকি। ৪  সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সিলেটের শিল্পসমৃদ্ধ এই আসনে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে আসনটি বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এবার উপনির্বাচনকে ঘিরেও দুই দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের দলীয় প্রতীকের বিজয় নিশ্চিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। টানা তিনবারের পর উপনির্বাচনেও জয়ের ধারাবাহিকতা চায় আওয়ামী লীগ। আর এর আগে টানা তিনবার বিজয়ী হওয়া জাতীয় পার্টিও মরিয়া আসন পুনরুদ্ধারে। শেষ সময়ে এসে জয়ের ধারাবাহিকতা ও আসন পুনরুদ্ধারের মিশন নিয়ে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ভোটের লড়াই। গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটের মাঠের এমন উত্তাপ দেখেননি স্থানীয় ভোটাররা। সিলেট-৩ আসনকে একসময় জাতীয় পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। দলের সাংগঠনিক কাঠামোও ছিল বেশ শক্তিশালী। এরশাদ সরকারের পতনের পরও এ আসনের জনসাধারণের মধ্যে বেশ প্রভাব ছিল জাতীয় পার্টির। ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এ মুকিত খান। এরশাদের পতনের পরও ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আসনটিতে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির মুকিত খান। অর্থাৎ ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির অধীনে। এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাদের দলত্যাগসহ নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে দলটির সাংগঠনিক কাঠামো। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে নিজেদের ঘাঁটিতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে, ১৯৮৬ সালে আসনটি থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন ন্যাপ নেতা পীর হবিবুর রহমান। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। মধ্যখানে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী। এবার উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন শফি। দলের অবাধ্য হওয়ায় বহিষ্কার হতে হয়েছে তাকে। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। শুরুতে হাবিবের পক্ষে আওয়ামী লীগ দায়সারা হলেও শেষ সময়ে এসে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কেন্দ্র থেকেও দফায় দফায় আসছেন নেতারা। প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ অন্তত এক ডজন নেতা প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এসেছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও। আগামীকাল শেষ নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিতে ফের সিলেটে আসছেন জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পাশাপাশি জেলা ও মহানগরের নেতারাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সবমিলিয়ে আসনটি হাতছাড়া না করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দলের এই ঐক্য ও পরিশ্রমই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদী প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। ভোটের মাঠে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টি। হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘদিন থেকে ঝিমিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা লাঙ্গলের প্রচারণায় মেতে উঠেছেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে তারা পার্টির সমর্থকদের জাগিয়ে তুলছেন। দলীয় প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে বিজয়ী করার মাধ্যমে প্রায় দুই যুগ পর তারা আসনটি আবারও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ হাফডজন নেতা সিলেটে আসছেন। সবমিলিয়ে ভোটারদের মাঝে লাঙ্গলের জয়ের প্রতিচ্ছবি দেখছেন বলে জানিয়েছেন আতিক। তবে ইভিএমে কারচুপি ও নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার নিয়ে নিজের শঙ্কার কথাও গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। যদিও তা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তার মতে, নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখে আতিক আতঙ্কিত। তাই আগেভাগেই অজুহাত তৈরি করে রাখছেন। দলীয় নেতা-কর্মী সঙ্গে না থাকায় নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না বিএনপি থেকে বহিষ্কৃৃত সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী। তবে সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকার উন্নয়ন ও ব্যক্তি ইমেজ বিবেচনায় ভোটাররা তার পক্ষেই শেষ রায় দেবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর