বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সরকারি আদেশের পরও খোলেনি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো

মোস্তফা মতিহার

১১ আগস্ট লকডাউন শেষ হওয়ার পর ১৯ আগস্ট থেকে সরকারি আদেশে খুলে দেওয়া হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র ও পার্ক। শপিং মলে উপচে পড়া ভিড়, গণপরিবহনও চলছে অর্ধেক আসনের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ আসন নিয়ে। গণটিকা কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় লক্ষণীয়। সবকিছু ঠিকঠাকমতো চললেও এখনো খুলে দেওয়া হয়নি সংস্কৃতিচর্চার মঞ্চগুলো। ১৬ আগস্টে মোমেনা চৌধুরীর একক নাটক ‘লাল জমিন’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে বেইলি রোডের মহিলা সমিতির মঞ্চ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, চিত্রশালা, সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তন, বেঙ্গল আর্ট গ্যালারি, দৃক্, গ্যালারি চিত্রক, শিল্পাঙ্গন, জয়নুল আর্ট গ্যালারি, গ্যালারি কায়া, জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তন, কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনসহ বিভিন্ন মঞ্চ ও গ্যালারি।

মঞ্চগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সংস্কৃতিচর্চা। দীর্ঘদিন চর্চা করতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠেছেন নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীরা। টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়মিত হয়ে থাকলেও সংস্কৃতির মূলধারা মঞ্চ থেকে এখনো ভেসে আসছে না সুরের মূর্ছনা, নৃত্যের ঝংকার আর নাটকের সংলাপ। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে উপজীব্য করে এগিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শিল্পানুরাগীদের বিনোদনের খোরাক জোগাতে কতটুকুই বা সক্ষম হচ্ছেন এমন প্রশ্নও উঠছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। সব বিষয়ে সচেতন সংস্কৃতি কর্মীরা অন্য যে কারও চেয়ে সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকলেও সাংস্কৃতিক মঞ্চগুলোর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের সংস্কৃতিচর্চা। যার কারণে সুস্থধারার সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মহানগরীর বিনোদনপিপাসুরা। সিনেমা হল খুলে দিলেও নাটক, সংগীত, নাচ ও আবৃত্তির মঞ্চ ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনের গ্যালারিগুলো খুলে না দেওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের মধ্যে।

বরেণ্য নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও আরণ্যক নাট্যদলের প্রধান মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, সিনেমা হল সবই খোলা। তাহলে সংস্কৃতি কর্মীরা কী দোষ করল? আমি মনে করি অবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চগুলোসহ সারা দেশের সব মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ থিয়েটারের কর্মকর্তা খন্দকার শাহ আলম বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো খুলতে যত দেরি হবে সংস্কৃতিচর্চার ব্যাঘাত তত বেশি ঘটবে। মঞ্চে অভিনয় করার জন্য নাট্যকর্মীরা, গান গাওয়ার জন্য সংগীতশিল্পীরা, আবৃত্তি করার জন্য বাচিকশিল্পীরা আর নাচ করার জন্য নৃত্যশিল্পীরা মুখিয়ে আছেন। অতিদ্রুত সব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই।’

বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, বরেণ্য সংগীতশিল্পী ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে না? একজন সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে অন্য সবার মতো বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করেছে।’

নৃত্যশিল্পী প্রিয়াঙ্কা রানী দেবনাথ বলেন, ‘সবকিছু চলছে স্বাভাবিকভাবে, পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। সরকারি নির্দেশে বিনোদন কেন্দ্র ও সিনেমা হলও খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মঞ্চগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আমাদের ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ- দ্রুত সব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খুলে দিন।’

কেন শিল্পকলা একাডেমির পাঁচটি মিলনায়তন ও আর্ট গ্যালারি খুলে দেওয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও নাট্যকলার পরিচালক আফসানা মিমিকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। সংস্কৃতির বৃহৎ স্বার্থে শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশের সব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতি কর্মীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর