বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভ্যাট ফাঁকির টাকা পরিশোধ করেছে আলিশা মার্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্টে অভিযান চালিয়ে ৫২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এরই মধ্যে এই ভ্যাট ফাঁকির টাকা জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফরমে ব্যবসা পরিচালনা করছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ জুন আলিশা মার্টে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানের তথ্য গতকাল সাংবাদিকদের জানানো হয়। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর জানায়, জুন মাসের ওই অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী অনলাইনে অর্ডার নেয়। এরপর ক্রেতার কাছে সেই পণ্য বিক্রি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত কমিশনের ওপর আরোপিত ভ্যাট যথাযথভাবে প্রদান করে না।

অভিযানে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আরিফ আহমেদ ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংশ্লিষ্ট দলিল উপস্থাপন করে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করে হিসাব বিবরণীও জব্দ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে আলিশা মার্ট মোট ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। এসব পণ্যের ক্রয়মূল্য ছিল ১৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৬ টাকা। এ ক্ষেত্রে কমিশন হিসেবে তাদের আয় ৬ কোটি ৪৮ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭১ টাকা, যার বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে প্রযোজ্য ভ্যাট দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা।

অনলাইনে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা দেয়নি। এ ক্ষেত্রে উক্ত মেয়াদে কমিশন বাবদ অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে উল্লিখিত সময়ে বিভিন্ন কেনাকাটার ওপর উৎসে ভ্যাট ৪ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৭ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৩ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৬ টাকার ফাঁকি দিয়েছে। অর্থাৎ উল্লিখিত ৫ মাসে কমিশনের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা এবং উৎসে ভ্যাট বাবদ ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৬ টাকাসহ সর্বমোট ৫২ লাখ ২৯ হাজার ১৬০ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়। পরে ভ্যাট গোয়েন্দা দফতরে অনুষ্ঠিত শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ মেনে নেয় আলিশা মার্ট। তারা স্বেচ্ছায় ও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকারি কোষাগারে এ ভ্যাটের অর্থ জমা করে। বিষয়টি ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবেও জানিয়েছে তারা।

ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত থাকায় অনলাইন প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্টের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলার প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম আরও মনিটরিং করা ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়ম আছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর