রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দুর্দশা লাঘবে তিস্তাপাড়ের মানুষ চায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন

ফি-বছরই বন্যা-খরা

নজরুল মৃধা, রংপুর

প্রতি বছরই বন্যা ও খরায় তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারী হচ্ছে। তিস্তা নদীর দুই পারের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। তাই দুর্দশা লাঘবে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চান তিস্তাপাড়ের মানুষ। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল পর্যন্ত নদী খনন করা। নদীর দুই তীর রক্ষা বাঁধ, নদী ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন হবে, সেই মাটি নদীর দুই পাশে ভরাট করে ইপিজেড, সোলার পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা রয়েছে চীনা প্রকৌশলীদের। চীনা প্রকৌশলীদের একটি প্রতিনিধি দল ডালিয়া ব্যারেজ ও তিস্তার নদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে প্রকল্পের সম্ভাবতা যাচাই করেছেন। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে আটকে আছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন কে করবে বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় ফাইল পরিকল্পনা কমিশনের লালফিতেই বন্দী হয়ে আছে। এসব তথ্য জানা গেছে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে।

শুকনো মৌসুমে তিস্তার চারদিকে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকায় স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়ার উপক্রম দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা প্রকল্পে প্রতি বছরই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারেজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়ে। তখন ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট রাত দিন খুলে রেখেও পানি সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমে তিস্তা অববাহিকার মানুষের সময় কাটে দীর্ঘশ্বাসে। শুকনো মৌসুমে ভারতে পানির ওপর নির্ভরতা থাকায় তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শুকনো মৌসুমে ভারতের কাছে পানির জন্য হাত পাততে হবে না। এ ছাড়া তিস্তা নদী ঘিরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটারের বেশি খাল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব খালে পানি ধরে রাখতে পারলে সারা বছর এই পানি ব্যবহার করা যাবে। নদীতে ১২ মাস পানি থাকলে কৃষিকাজ থেকে আরম্ভ করে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। সেই সঙ্গে বদলে যাবে দেশের চেহারা। তাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন নদী নিয়ে কাজ করে এ ধরনের একাধিক সংগঠনের নেতারা। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ বলেন, পাঁচ বছর আগের এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এখন আরও বৃদ্ধি পাবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের ওপরমহলের। তিনি আশা প্রকাশ করেন দ্রুত এ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর