সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি

পদ্মায় পানি বাড়ছে বহু গ্রাম প্লাবিত গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পাশাপাশি ঘাঘটে ভাঙন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। দেশের ১০৯ পানি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৬ পয়েন্টে পানি কমেছে, বেড়েছে ৩৯ স্টেশনে আর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে ৪ স্টেশনে। তবে দেশের ৮ নদীর ১৯ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে চলমান সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও উন্নতি হচ্ছে। এই উন্নতির ধারা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। একই সঙ্গে মধ্যাঞ্চলের বন্যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার এই ধারা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পানি কমার এই ধারা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৩টি জেলা বন্যা আক্রান্ত। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলা বন্যা কবলিত। বর্তমানে আটটি নদীর পানি ১৯ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তুরাগ, কালিগঙ্গা, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পাশাপাশি এবার শুরু হয়েছে ঘাঘট নদের ভাঙন। ছয় পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর ভাঙছে স্থানীয় কবরস্থান। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে রাস্তাসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি ও উঠতি আমনের খেত। অন্যদিকে গত দুই সপ্তাহে গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নসহ বেশ কিছু এলাকায় দুই শতাধিক বসতভিটা তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। করোনার পাশাপাশি ঘাঘটের ভাঙনে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

পদ্মার পানি-বহু গ্রাম প্লাবিত : গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে রাজবাড়ীর চারটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামে পদ্মার পানি প্রবেশ করেছে। এতে জেলার সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও কালুখালীর ৭ হাজার ৫১৫টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পানিবন্দী এসব পরিবার যাতায়াতসহ গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। হতদরিদ্রদের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। তাদের অনেকেই কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

মানিকগঞ্জে অভ্যন্তরীণ নদীতে পানি বৃদ্ধি : মানিকগঞ্জে অভ্যন্তরীণ নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পদ্মা- যমুনায় পানি স্থিতিশীল হলেও কালিগঙ্গা, ধরেশ্বরী, ইছামতিসহ অভ্যন্তরীণ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাড়েনি। বর্তমানে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছে লোকজন।

 পানি বাড়ায় কালিগঙ্গা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।  ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গতকাল মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াকান্দি, চরবেউথাসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।

ত্রাণ বিতরণ : সিরাজগঞ্জে বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। রবিবার সকালে পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা (পিডিএস) এর উদ্যোগে সদর উপজেলার কুশাহাটা ও গুণেরগাতী এলাকায় এ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল বন্যার্তদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বন্যা কবলিত ৪০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল, ১০০ পরিবারের মাঝে শিশু খাদ্য এবং ১০০ পরিবারের মাঝে গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত।

পদ্মায় পানি বাড়ছে : রাজশাহীতে টানা ছয় দিন পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার বিকালে পানির স্তর ছিল ১৬.৮৩ মিটার। বুধবার তা বেড়ে হয় ১৬.৮৯ মিটার, বৃহস্পতিবার ১৬.৯৪ মিটার, শুক্রবার ১৬.৯৭ মিটার, শনিবার ১৭.০১ মিটার। রবিবার তা বেড়ে হয় ১৭.০৭ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। তবে পদ্মার পানিতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। অনেকে সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের স্থাপনা।

নদীভাঙন অব্যাহত : আবারও বাড়তে শুরু করেছে পদ্মার পানি। রবিবার সকাল ৬টায় শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোতে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। জেলার জাজিরা উপজেলার পালেরচর, বড়কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর পাড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কমার দ্বিতীয় দিন গতকাল পানি আরও হ্রাস পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং ঘাঘট নদের পানি ২২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে এতে বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। লোকালয় থেকে পানি না সরায় তারা পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।

বগুড়ায় পানির তোড়ে ধসে গেল সড়ক : বন্যার পানির তোড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল খেয়াঘাটের সড়কটি ধসে গেছে। ধসে যাওয়া অংশে বালুর বস্তা ফেলে মেরামত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সড়ক পারাপারে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার পর তাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে পানি কমে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর