মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কবে

আদালতের নির্দেশনা জেলা প্রশাসকের চিঠিতেও কাজ হচ্ছে না, প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কবে

দেশের জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্ণফুলী নদীর বুকে ও তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা নানা স্থাপনা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আদালতের নির্দেশনা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও জেলা প্রশাসনের চিঠির পরও তা উচ্ছেদ হচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এমন অবস্থায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ১৫ দিনের মধ্যে কর্ণফুলী মোহনাসহ নদীর তীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রতিবেদন দিতে বলেছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কর্ণফুলী নদী ও তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আবেদন করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বরাবর। এ ব্যাপারে ২৩ পৃষ্ঠার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সংযুক্ত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নদী রক্ষা কমিশন ২৮ আগস্ট ‘কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা মাছবাজার ও মেরিনার্স পার্কের নামে বালুমহালসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আবেদন’ শীর্ষক একটি চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় বরাবর। চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের পত্রের পর্যালোচনান্তে সিএস ম্যাপ অনুসারে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই ও রাজখালী খালের মোহনাসহ কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রতিপালন প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।’

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশন ২৮ আগস্ট চিঠিটি চট্টগ্রামের চারটি দফতরকে দিয়েছে। এরই মধ্যে নয় দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু কোনো সংস্থার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ১৫ দিন পার হলে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।’ তিনি বলেন, ‘এর আগেও আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশনামতে ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এরপর বন্দর কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু নতুন ব্রিজ-চাক্তাই-রাজাখালী-ফিরিঙ্গি বাজার ও মাঝির ঘাট এলাকায় আর কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে সেখানে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে।’ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে টানা পাঁচ দিনের অভিযানে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ ও প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়। আলোর মুখ দেখে পাঁচটি খালের মুখ। বন্দর এলাকা থেকে শুরু করে বারিক বিল্ডিং মোড়-গোসাইলডাঙ্গা-সদরঘাট-মাঝির ঘাট-শাহ আমানত সেতু হয়ে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলেমিটার নদীর তীরকে তিন ভাগ করে শুরু হয় অভিযান। প্রথম ধাপে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয় সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার অংশে। ওই বছর ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এর পর থেকে বন্দর লালদিয়ার চর এলাকাসহ আশপাশে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে। সরেজমিন দেখা যায়, নতুন ব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে ফিরিঙ্গি বাজার পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন স্থাপনা। ব্রিজের পশ্চিমে লাগোয়া জায়গাটি দখল করে করা হয়েছে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল। চলছে বালু দিয়ে ভরাট কাজ। সেখান থেকে রাজাখালী খালের মুখ পর্যন্ত স্থানে গড়ে উঠছে দোকানের পর দোকান। এর পরই আছে নদী দখল করে গড়ে ওঠা মাছের আড়ত। উচ্ছেদ ঠেকাতে নির্মাণ করা হয়েছে ধর্মীয়সহ নানা স্থাপনা। অন্যদিকে সদরঘাট এলাকায় উচ্ছেদকৃত স্থানগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক-লরি ও পণ্য লোড-আনলোডের ঘাট হিসেবে। এসব এলাকায় তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট টংয়ের দোকান। উচ্ছেদকৃত স্থানে রাখা হয়েছে লবণ, মসুর ডালের বস্তাসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্য। আনু মাঝির ঘাট, মাঝির ঘাট, আদমঘাট, লবণঘাট, বিবি মসজিদ লেন, বারিক বল্ডিং মোড়ের ঘাট, সদরঘাট লাইটারেজ জেটিঘাট, কর্ণফুলী ঘাটসহ উচ্ছেদকৃত স্থানসমূহে অভিন্ন অবস্থা।

উচ্ছেদের সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষে দেওয়া লাল রঙের নিষেধাজ্ঞা সাইনবোর্ডটি কয়েক স্থানে দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয়। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অর্থসংস্থান না হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। ভূমিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অর্থসংস্থানের পর অভিযান শুরু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর