মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে স্বাস্থ্য খাতে অপচয়

দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স সচল হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রোগীর চাহিদা বিবেচনায় সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেলেও তা কাজে আসেনি অনেক ক্ষেত্রেই। দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে গ্যারেজে, বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় চালু করা যায়নি শিশুদের জন্য বিশেষ ইউনিট, জ্বালানির অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ধুলা জমে আছে জেনারেটরে। রাজশাহীর স্বাস্থ্য খাতের এমন চিত্র ফুটে উঠেছে সম্প্রতি। এ নিয়ে এখন আলোচনায় সরব সব মহল। আইসিইউর সুবিধাসংবলিত অত্যাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স দুই বছর ধরে পড়ে আছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) অ্যাম্বুলেন্সটির ভিতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভেন্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটি ২০১৯ সালের ৬ মে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর জন্য একজন আইসিইউ চিকিৎসক ও নার্স প্রয়োজন। সেই লোকবল না থাকায় এটি চালানো যাচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্সটির গায়ে লেখা আছে ‘সরকারি সম্পত্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়’। আইভেকো ব্র্যান্ডের অ্যাম্বুলেন্সটি ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে। এটি সরবরাহ করেছে মেসার্স ফেরিটেক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) অ্যাম্বুলেন্সটি কিনে হাসপাতালে সরবরাহ করেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এটি কেউ দিয়েছেন অথবা কিনে এনে তাদের হাসপাতালে ‘পুশ’ করা হয়েছে।

 এগুলো স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়নি। তিনি বলেন, এই অ্যাম্বুলেন্স কোথাও পাঠাতে হলে একজন আইসিইউ জ্ঞানসম্পন্ন চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্স সঙ্গে দিতে হবে, যাতে তারা অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরেই হাসপাতালের মতো করে রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে পারেন। মৃত্যুহার কমানোর পাশাপাশি শিশুদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) আধুনিক স্পেশাল কেয়ার নিওনেটাল ইউনিটে (স্ক্যানো) ৪০টি বেড দেয় ইউনিসেফ। গত দুই বছরে শুধু বিদ্যুতের অভাবে তা চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, শিশু মৃত্যুর হার কমাতে ২০১৯ সালে হাসপাতালে ৪০টি আধুনিক শয্যা দেয় ইউনিসেফ। স্ক্যানো ইউনিট মূলত প্রি-ম্যাচিউরড শিশুসহ ২৮ দিন বয়সী শিশুদের জীবনরক্ষায় বিশেষ উপযোগী সেবা। ইউনিটটিতে আছে র‌্যাডিয়েন্ট ওয়ার্মার, পালস অক্সিমিটার, ফটোথেরাপি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। অপরিপক্ব, স্বল্প ওজনসহ নানাবিধ জটিল সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব এখানে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় এ যন্ত্রগুলো দেওয়া হয়েছিল। রামেকের স্ক্যানো ইউনিট মূলত শিশুদের প্রপার ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবেই এটি পড়ে আছে।’ তিনি আরও বলেন ‘এ মেশিনগুলো চালাতে অনেক ভোল্টেজ দরকার। আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে যে লাইন আছে, তা দিয়ে যদি সাপ্লাই দেওয়া যায়, তখন এটি প্রপার ভোল্টেজ পায় না। আমার আগের ডাইরেক্টরও এটি চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। আমি এসে যখন দেখলাম, তখন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেনারেটরটি ১৭ বছর ধরে পড়ে আছে। জ্বালানি তেলের বরাদ্দ না থাকায় সেটিও সচল হয় না। ফলে জেনারেটরের ব্যাটারিসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে তাই রোগীদের ভরসা মোমবাতি। চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ৪০ কেভির এই জেনারেটর বরাদ্দ দেয়। এতে ব্যয় হয় ৭ লাখ টাকা।

এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সামগ্রীসহ মোট ব্যয় হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। ৪০ কেভির এই জেনারেটরে ২৫-৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘জেনারেটরটি শুধু চালু করতে প্রায় ৩০ লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়, যা ব্যয়বহুল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এত পরিমাণ তেল কেনার কোনো তহবিল নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর