বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

২২ বছর পর নিখোঁজ মাকে পেয়ে আনন্দে সন্তানরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

 ২২ বছর পর নিখোঁজ মাকে পেয়ে আনন্দে সন্তানরা

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় দীর্ঘ ২২ বছর পর নিখোঁজ মাকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সন্তানরা। ঢাকা থেকে সোমবার রাতে ফিরেছেন তারা। মধ্যরাত পর্যন্ত ধুনট উপজেলার নিজ গ্রামে বৃদ্ধা আমেনাকে একনজর দেখার জন্য শত শত মানুষ ভিড় করে। বাড়ি ফিরে পুত্রবধূর রান্না করা খাসির মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছেন। সকালে আমেনাকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে কয়েক শ মানুষ ভিড় করেন। গ্রামবাসী দীর্ঘদিন পর আমেনাকে দেখে চিনতে পারেন। ১৯৯৯ সালে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর তার আর খোঁজ মেলেনি। তার সন্তানরাও মাকে এত দিন মৃতই জানতেন। তাই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রেও ‘মৃত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সন্ধান পাওয়ার পর নেপাল থেকে দীর্ঘ ২২ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন আমেনা। তবে এখন তার বয়স প্রায় ৮০ বছর। তার বাড়ি ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাজবাড়ী গ্রামে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নেপাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন আমেনা বেগম। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতেই সন্তানদের সঙ্গে ধুনটের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। বড় বোনের অপেক্ষায় ছিলেন ধুনটের ছোট চাপড়া গ্রামের আম্বিয়া। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সরকারের ভালো করুক। সরকারের কারণে এত বছর পর বোনকে ফিরে পেলাম।’

আমেনার বড় ছেলে আমজাদের ছেলে আদিলুর রহমান আদিল জানান, সরকারিভাবে তার দাদিকে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো টাকা খরচ হয়নি। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। তিনি আরও জানান, তার যখন আট বছর বয়স তখন তার দাদি নিখোঁজ হন। দাদি তাকে না চিনলেও দাদিকে তিনি চিনতে পেরেছেন। আমেনা বেগমের ছেলে ফটিক বলেন, ‘ভেবেছিলাম মা মারা গেছেন। এত দিন পর মাকে পেলাম। এর চেয়ে বড় খুশি আর কী হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার দূতাবাসের মাধ্যমে সোমবার দুপুর ১টায় ঢাকা বিমানবন্দরে নিয়ে আসে আমার মাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে মাকে খুঁজে পেতাম না। ফেসবুকের সুবাদে খুঁজে পেলাম। শুক্রবারও ভিডিওকলে মার সঙ্গে কথা হয়। সেখানে নেপালি অধিবাসীও ছিল।’ ভিডিওকলে আশ্রয়দাতা নেপালিদের ধন্যবাদও জানানো হয়।

আমেনার বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার শাশুড়ি মানসিক রোগী ছিলেন। পাগলের মতো ঘুরে বেড়াতেন। তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছিল।’

ছোট ছেলে ফরাইজুল বলেন, ‘হঠাৎ করেই গত জুনে খবর আসে মা বেঁচে আছেন। নেপালের সানসুরি জেলার ইনারুয়া পৌরসভা এলাকায় তার সন্ধান মিলেছে। এরপর ভিডিওকলে মার সঙ্গে কথা হয়। পরে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় মাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মাকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে জান্নাতের সুখ পেয়েছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর