বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

দুই মেরুতে অবস্থান সভাপতি-সম্পাদকের

মাহমুদ আজহার

বছরের পর বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও কিছুদিনের মধ্যেই শীর্ষ দুই নেতা দুই মেরুতে অবস্থান নেন। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে কয়েক দফা দুই গ্রুপের মধ্যে চুলোচুলি, হাতাহাতি, গালাগালি ও মারামারিও ঘটে।

জানা যায়, শীর্ষ দুই নেতার দ্বন্দ্বে এখন মহিলা দলের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ডও খুঁজছেন নতুন নেতৃত্ব। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আজ মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতসহ সারা দেশে দুই দিনের কর্মসূচি নিয়েছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর যে কোনো সময় মহিলা দলের নতুন কমিটি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, মহিলা দলের নতুন নেতৃত্বে থাকতে মরিয়া বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই। শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে না থাকতে পারলে ওই পদে পছন্দসই এক নেতাকে দেখতে চান আফরোজা আব্বাস। অন্যদিকে সুলতানা আহমেদ সভাপতি হতে মরিয়া। বিএনপির নির্ভরযোগ্য এক সূত্র জানান, শীর্ষ এ দুই নেতাই পরিবর্তন হতে পারেন। নতুন কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনায় আছেন শিরিন সুলতানা, বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, নিলোফার চৌধুরী মণি, হেলেন জেরিন খান, শাম্মি আক্তার, নিপুণ রায়চৌধুরী, ফরিদা ইয়াসমিন, নায়াবা ইউসুফ প্রমুখ। মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে এদের নাম। তবে নিপুণ রায়চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, তিনি মহিলা দল করতে আগ্রহী নন। তবে দল চাইলে যে কোনো জায়গায় কাজ করতে প্রস্তুত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মহিলা দলও এর বাইরে নয়। সময়মতো কমিটি গঠন হবে। তা ছাড়া বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠনে নানা মত থাকতেই পারে। একে কোন্দল বলা যাবে না।’ জানা যায়, মহিলা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড। অনেকটা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে এ সংগঠনটির কার্যক্রমও স্থগিত রাখা হয়। যদিও এখন সাদামাটা কর্মসূটি পালন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার মারামারি, চুলোচুলিও হয়েছে। দুই নেতার দ্বন্দ্বে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। সর্বশেষ ৩০ মে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর এক কর্মসূচিতে গুলশান কার্যালয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকের মধ্যে গালাগালি হয়। এর আগে ৮ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র?্যালি শুরুর ঘটনায় আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে বাগ্বিতন্ডায় জড়ান সুলতানা আহমেদ। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি র?্যালিতে অংশ নিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হন আফরোজা আব্বাস। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মাইকে বক্তৃতা করতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন সুলতানা আহমেদ। এ সময় উত্তেজিত হয়ে তিনি জানতে চান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসার আগেই কেন বক্তৃতা শুরু করে দেওয়া হলো? এ নিয়ে দুই গ্রুপ ব্যাপক বাগ্বিতন্ডায় জড়ায়।

জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন পালন উপলক্ষে নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক কর্মসূচি ঘিরে দুই গ্রুপে মারামারি ও চুলোচুলি হয়। এতে উভয় গ্রুপের কয়েকজন আহতও হন। পরদিন আফরোজা আব্বাস নেতা-কর্মীর একটি অংশ নিয়ে সুলতানার বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অনাস্থাপত্র দেন এবং তার বহিষ্কার দাবি করেন। এরপর বেশ কিছুদিন শীর্ষ দুই নেত্রীকে একসঙ্গে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

জানা যায়, গেল বছর মহিলা দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আফরোজা আব্বাস ১০ জন অনুসারী ও সুলতানা আহমেদ ১০ জন অনুসারী নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানান। ভার্চুয়াল সভা করতে চাইলেও বিএনপি থেকে নিষেধ করা হয়। জিয়াউর রহমানের কবরে গেলে সেখানেও দুই নেত্রী একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেননি।

মহিলা দল সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল চাইলে যে কোনো সময় মহিলা দল পুনর্গঠন করতে পারে। যে কাউকে নেতৃত্বেও আনতে পারে। এটা সত্য যে আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু আমরা বেশ কিছু কাজও করেছি। ৩০টি জেলার সম্মেলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর দুই শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলেও উত্তরের ১৭ ও দক্ষিণে ১৪ থানা কমিটি দেওয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর