শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন বছরেও পাস হলো না বরিশাল খাল পুনঃখনন প্রকল্প

রাহাত খান, বরিশাল

একটু ভারী বৃষ্টি কিংবা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই জলাবদ্ধ হয় বরিশাল মহানগর। ভাটার সময় নদীর পানি কমলেও খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পানি আটকে থাকে। এতে শহরের পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহান ৭ লাখ নগরবাসী। দীর্ঘমেয়াদে জলাবদ্ধতা রোধের পাশাপাশি খালগুলো পুনঃখনন করে প্রাচ্যের ভেনিস বরিশালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি তাদের। বরিশাল মহানগরে ৪৬টি খাল প্রবহমান ছিল। দিনে দিনে খালগুলোর দুই পাশ দখল হয়ে গেছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে খালের বিভিন্ন অংশ। বটতলা খাল ও ভাটার খাল ভরাট করে বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। চরের বাড়ী এলাকায় শোভা রানীর খাল কাগজে থাকলেও বাস্তবে তার চিহ্ন নেই। ওই খালের ওপর গড়ে উঠেছে বড় বড় ভবন। দুই তীরে দখল এবং ময়লা ফেলে সাগরদী খাল, জেল খাল, চাঁদমারি খাল, নাপিতের খাল, টিয়াখালী খাল, লাকুটিয়া খাল, নথুল্লাবাদ খালসহ অন্যান্য খাল ভরাট করেছেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। এ কারণে একটু ভারী বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানি উঠলেই তলিয়ে যায় মহানগরের রাস্তাঘাট-বাড়িঘর।

ভুক্তভোগী বাসিন্দা মহানগরের ১ নম্বর সিঅ্যান্ডবি পোল এলাকার জুলফিকার আলী বলেন, মহানগরের মধ্যে প্রবহমান খালগুলোয় নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হতো। চলত বড় বড় গয়না নৌকা। মাছের অভয়াশ্রম ছিল খালগুলো। কিন্তু দিনে দিনে দুই পাড় দখল ও ময়লা ফেলে খালগুলো হত্যা করা হয়েছে। খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি কিংবা জোয়ারে জলাবদ্ধ হয়ে যায়। বরিশাল মহানগরের পরিবেশ-প্রকৃতি এবং নগরবাসীকে বাঁচাতে খালগুলো পুনঃখনন জরুরি বলে মনে করেন খালপাড়ের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর, মো. বেল্লাল হাওলাদারসহ অন্যরা।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। সদর আসনের এমপি আওয়ামী লীগের, সিটি মেয়রও আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচিত। তাদের কাছে ব্যাপক উন্নয়নের প্রত্যাশা মানুষের। গত তিন বছরে মহানগরে নতুন কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন ব্যর্থতার এ দায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ওপর বর্তায়।’

সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ দখল-দূষণে মহানগরের খালগুলো মরে গেছে। বিগত দিনে কিছু খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। একটি খাল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এজন্য জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। মহানগরের পরিবেশ বাঁচাতে সব খাল পুনঃখনন ও দুই তীরে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে। এ প্রকল্প পাস হলে খাল খনন করে বরিশালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।’

এদিকে বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, ‘নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে মহানগরের প্রধান পাঁচটি খাল পুনঃখননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি। এ লক্ষ্যে সমীক্ষা হয়ে গেছে। বর্তমান মেয়াদের মধ্যেই ওই পাঁচটি খাল পুনঃখনন করা হবে।’

সর্বশেষ খবর