শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে চলছে এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজি

দিতে হয় কথিত সেয়ানা ট্যাক্স, সেয়ানার কাছে নগরবাসী কার্যত অসহায়

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে চলছে এলাকাভিত্তিক কথিত ‘সেয়ানা’দের দাপট। নগরীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকায় রয়েছে এসব সেয়ানার বিচরণ। এলাকায় চলতে-ফিরতে কিংবা ব্যবসা করতে সাধারণ লোকজনকে তাদের চাঁদা দিতে হয়। যা তাদের ভাষায় ‘সেয়ানা ট্যাক্স’ হিসেবে পরিচিত। এসব সেয়ানার কাছে নগরবাসী কার্যত অসহায়। অভিযোগ রয়েছে, তাদের দমনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজ গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। প্রায়ই কোনো না কোনো চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজদের সুনির্দিষ্ট তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছেন। এসব চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক কথিত সেয়ানাদের নিয়ন্ত্রণ করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই বাধা হয়ে দাঁড়ান নেতারা। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজ গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানা এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় কয়েক শ চাঁদাবাজ গ্রুপ। যারা স্থানীয়দের কাছে ‘সেয়ানা’ হিসেবেই পরিচিত। কথিত এসব সেয়ানা এলাকায় চালু করেছেন অভিনব এক ‘ট্যাক্স’। যা তাদের ভাষায় বলা হয় ‘সেয়ানা ট্যাক্স’। নগরীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত শপিং সেন্টারের দোকানদার কিংবা সাধারণ ব্যবসায়ী সবাইকেই ‘নির্বিঘ্নে’ ব্যবসার জন্য তাদের ট্যাক্স দিতে হয় দৈনিক এবং মাসিক হারে। এলাকায় নতুন ঘর করতে, জায়গা বেচাকেনা কিংবা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে চাঁদাবাজ গ্রুপগুলোকে দিতে হয় সেয়ানা ট্যাক্স। চট্টগ্রাম নগরীতে সক্রিয় চাঁদাবাজ গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে আগ্রাবাদ এলাকার ইকবাল ওরফে ধামা ইকবাল গ্রুপ, জাহাঙ্গীর ওরফে সোর্স জাহাঙ্গীর গ্রুপ, সাইফুল ওরফে ট্যাবলেট সাইফুল গ্রুপ, মাসুদ রানা গ্রুপ, ফক্স রানা গ্রুপ, মোগলটুলী এলাকার সাকিব ওরফে কালো সাকিব, নিজাম খান ওরফে শুাটার নিজাম গ্রুপ, চকবাজার এলাকার রউফ গ্রুপ, কায়সার গ্রুপ, বিপ্লব গ্রুপ, ছোট দেলোয়ার গ্রুপ, কিলার ফয়সাল গ্রুপ, পিস্তল গিয়াস গ্রুপ, ইভাক গ্রুপ ও সবুজ গ্রুপ। পাঁচলাইশ এলাকার ফিরোজ গ্রুপ, রবিন গ্রুপ, জসিম গ্রুপ, লম্বা নাছির গ্রুপ। চান্দগাঁও এলাকার হামকা গ্রুপ, নোমান গ্রুপ, পিচ্ছি শহীদ গ্রুপ, আজরাইল গ্রুপ, শাহাদাত হোসেন ওরফে লেংড়া রিফাত গ্রুপ, ধামা জুয়েল গ্রুপ, বাটি রাশেদ গ্রুপ ও শাখাওয়াত হোসেন ওরফে লম্বা অভি গ্রুপ। সদরঘাট এলাকার মাহবুবুল হক সুমন গ্রুপ, কিলার আলমগীর গ্রুপ, রাসেল গ্রুপ, আবু ফয়সাল গ্রুপ ও ধামা ইমরান গ্রুপ। খুলশীর রাকিবুল হুদা গ্রুপ, সোহাগ গ্রুপ, আহমেদ বাপ্পি গ্রুপ ও ডেসকি শরীফ গ্রুপ। কোতোয়ালির কালা জুয়েল গ্রুপ, হাবিব গ্রুপ, মাহমুদুল করিম গ্রুপ, আবু জিহাদ সিদ্দিকী গ্রুপ ও জহির উদ্দিন বাবর গ্রুপ অন্যতম। নগরীর বাকলিয়া এলাকার এক অধিবাসী বলেন, ‘কয়েক মাস আগে পৈতৃক জমিতে বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার অনুসারীরা চাঁদা দাবি করেন। তাদের চাহিদামতো চাঁদা না দেওয়ায় বাড়ি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। পরে আরেক নেতার মধ্যস্থতায় অল্প কিছু টাকা দিয়ে ফের বাড়ি নির্মাণকাজ শুরু করি।’ একইভাবে নগরীর আগ্রাবাদের ফুটপাথের এক দোকানদার বলেন, ‘ফুটপাথে ব্যবসা করতে গেলে দৈনিকভিত্তিতে স্থানীয় দুটি গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়। তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করতে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর