রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রশস্ত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী

উভয় পাড়ে বনায়নের পরিকল্পনা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

প্রশস্ত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে গতকাল দুপুরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে চলছে নদী প্রশস্তকরণ কাজ -রোমান চৌধুরী সুমন

শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকার আড়াই কিলোমিটার শত ফুটের বেশি প্রশস্ত করা হচ্ছে। এতে শীতলক্ষ্যার নাব্য ফিরবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে এবং শীতলক্ষ্যার প্রশস্ততা বাড়াতে নদী খননের এই উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর। এ ছাড়া এ আড়াই কিলোমিটার এলাকাসহ শীতলক্ষ্যার উভয় তীরেই বনায়ন কর্মসূচি শুরুর কাজ  শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া দুই পাড়ের উচ্ছেদ কাজ চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, এক সময় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নগরী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ পরিচিতি পেয়েছিল শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করেই। ব্রিটিশ শাসনামলে এই শীতলক্ষ্যার মাতলাঘাটেই ভিড়ত ভারতীয়সহ বিদেশি জাহাজগুলো। মাতলাঘাট থেকে কলকাতা রুটে চলাচল করত জাহাজ। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের সেই ঐতিহ্য। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে প্রতিদিন ৭টি রুটে অন্তত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে থাকে। প্রতিদিন চলাচল করে থাকে অসংখ্য পণ্যবাহী নৌযান। ১৩টি খেয়াঘাটে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকায়। শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর সামনে অসংখ্য বৃহদাকারের জাহাজ নোঙর (বার্দিং) করে রাখে। এতে ওই এলাকাগুলো দিয়ে দুটি নৌযান পাশাপাশি যেতে পারে না। জোয়ারভাটার কারণে অনেক সময় চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। ছোট নৌযানের অনেকগুলোতেই সার্টিফিকেটধারী চালক নেই। অদক্ষ চালক দিয়েই অনেক নৌযান চলছে। প্রশিক্ষণ না থাকায় কোন দিকে হর্ন দিতে হবেও তাও অনেকে জানে না। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ও দূষণে মুমূর্ষু শীতলক্ষ্যার নৌরুটও ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। নৌরুট সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এদিকে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করে হাই কোর্ট। এরপর গত বছর শীতলক্ষ্যা নদীতে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ করা এলাকাগুলো যাতে পুনঃদখল না হয় সে লক্ষ্যে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাই কোর্টের নির্দেশে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) পদ্ধতিতে সিএস জরিপ মোতাবেক শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর উভয় তীরে ২ হাজার ৪০০টি নতুন সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১০০ ফুট পর পর সীমানা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে। এই সীমানা পিলার পাইলিংয়ের মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে। উচ্চতায় ১০ ফুট এবং বেস হচ্ছে ৫ ফুট বাই ৫ ফুট। যাতে কেউ ইচ্ছা করলেই সীমানা পিলার উঠিয়ে নিতে না পারে। তবে ঢাকার তুলনায় নারায়ণগঞ্জে সীমানা পিলার স্থাপন কার্যক্রম চলছে অনেকটাই মন্থর গতিতে।

এদিকে দখলদারদের ভরাটের কারণে শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় তীর সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। কারণ দখলদাররা নিজেদের দখল টিকিয়ে রাখতে নির্মাণাধীন বসতবাড়ির বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট করে আসছিল। যে কারণে সম্প্রতি নদীর প্রশস্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের শুরুর দিকে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কার্যালয়ের বিপরীতে শীতলক্ষ্যার পূর্ব তীরে ময়মনসিংহপট্টি এলাকাতে নদী খনন শুরু করা হয়। তবে বিপত্তি বাধে খনন করা এই বর্জ্য মিশ্রিত মাটি অপসারণ নিয়ে। কারণ বালু মাটির চাহিদা থাকলেও বর্জ্য মিশ্রিত মাটি নিতে আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট থেকে উত্তর দিকে সিএসডি খাদ্যগুদাম পর্যন্ত এবং বন্দর খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণ দিকে মেরিন টেকনোলজি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী প্রশস্ত হবে। যা পাশে ১০০ থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত হবে। ইতিমধ্যে নদীবন্দরের বিপরীত দিকে আমরা বেশ কিছু এলাকা খনন করেছি। পর্যায়ক্রমে এ আড়াই কিলোমিটার এলাকা নদী আরও শত ফুটের বেশি প্রশস্ত হবে।

পর্যায়ক্রমে শীতলক্ষ্যার অন্যান্য এলাকাতেও চলবে নদী প্রশস্তের কার্যক্রম। এ ছাড়া নদীর সীমানা পিলার স্থাপন কার্যক্রমের পাশাপাশি বনায়ন কর্মসূচিও চলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর