রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
খেলার মাঠ

উন্মুক্ত স্থানের খোঁজে চসিক

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মহানগর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, জলাশয় ও পুকুর। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং প্রতিযোগিতা করেই দখল-ভরাট হচ্ছে নগরের উন্মুক্ত স্থানগুলো। কেবল প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টিতে তা কমছেই। তবে এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, জলাশয় ও পুকুর উদ্ধার এবং চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে এ ব্যাপারে করণীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চসিকের প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘দিন দিন নগরের উন্মুক্ত স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগের। কিন্তু এগুলো নিয়ে তো কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। তাই মেয়রের নেতৃত্বে আমরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে নান্দনিক গড়তে নগরের ২৪টি স্পটকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কাজ করতে নগরে বিদ্যমান সেবা সংস্থাগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হবে।’ একটি আদর্শ নগরে মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ খেলার মাঠ বা খোলা জায়গা থাকা দরকার। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগীতে সে ধরনের কোনো জায়গা নেই। সিডিএর দাবি-নগরে দুই শতাংশ খেলার মাঠ আছে। অন্যদিকে, একটি আদর্শ আবাসিক এলাকার জন্য ১৩ শতাংশ খেলার মাঠ থাকা দরকার। বর্তমানে নগরীর মোট আবাসিক এলাকায় শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ মাঠ আছে। ১৯৯৫ সালের মহাপরিকল্পনায় শিশু-কিশোরদের মানসিক-শারীরিক বিকাশকে মাথায় রেখে পুরো নগরীর ১০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রাখার বিধান রাখা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অন্যদিকে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ থাকার কথা। অথচ নগরীর অধিকাংশ বিদ্যালয়েই খেলার মাঠ নেই। চসিকের ৪৮টি বিদ্যালয় আছে। কিন্তু তার মধ্যে খেলার মাঠ আছে মাত্র ১০টি বিদ্যালয়ের। পক্ষান্তরে, চট্টগ্রাম নগরে কয়টি খেলার মাঠ আছে এ নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে এ নগরেই ছিল খেলার মতো উপযুক্ত মাঠ। এসব মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেটসহ নানা খেলা খেলে জাতীয় দলেও অংশগ্রহণ করেছেন অনেকে। কিন্তু আর তা অবশিষ্ট নেই। এখন নগরে দুটি আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম এবং হাতেগোনা কয়েকটি বড় মাঠ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো মাঠ নেই। নগরের ছোট-বড় মাঠগুলোর মধ্যে আছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম, হালিশহরের আবাহনী মাঠ, প্যারেড মাঠ, রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও বাওয়া স্কুলমাঠ। এর মধ্যে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয়-আন্তর্জাতিক খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে এ দুটি মাঠ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।

এ ছাড়া বাকি মাঠগুলোতে নগরের শিশু-কিশোররা খেলার সুযোগ পায় না। উল্টো এসব খেলার মাঠ এখন মেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। বছরজুড়ে এসব মাঠে আয়োজন করা হয়ে থাকে বাণিজ্য মেলা, বস্ত্রমেলা, তাঁতমেলা, বৃক্ষমেলা, বিজয় মেলা, উন্নয়ন মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বৈশাখী মেলা, পিঠা উৎসব, পাখিমেলা, গাড়িমেলা ও ফুড উৎসব। একটি মেলা শেষ হলে তা আবার মাঠের রূপ পেতে পেতে আরেকটি মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়। ফলে খেলার মাঠে খেলার কোনো সুযোগই পায় না শিশু-কিশোররা। অতীতের খেলা হতো এমন মাঠে বর্তমানে খেলার কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই।  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর