বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ স্পিডবোট ট্রলার বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ভারতের স্থলভাগে অবস্থান করছে। এর কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি বেড়েছে, বৃষ্টি হচ্ছে অন্যান্য অঞ্চলেও। তেমন বৃষ্টি না হলেও সকাল থেকেই ঢাকার আকাশের মুখ ভার। দুপুর ১২টার কিছু পর বৃষ্টিও শুরু হয়। বৃষ্টির এ প্রবণতা দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গতকাল সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর ৪) জানানো হয়েছে, ওড়িশা ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সকাল ৬টায় ওড়িশা-ঝাড়খন্ড ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

 সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে পারে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে গতকাল সকালে বরিশাল অঞ্চলে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বরিশাল আবহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ২১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় আসা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে স্থানীয় নদীবন্দরগুলো। বরিশালে স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় বিআইডব্লিউটিএর ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট। ফেরিতে যানবাহন ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটে। ফলে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের দুই প্রান্তে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। অন্যদিকে গতকাল ইলিশার রামদাসপুর চ্যানেলে পাথরবোঝাই একটি বাল্কহেড (কার্গো জাহাজ) ডুবে যায়। এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনায় ১১ জন মাঝিমাল্লাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে খাজুরাসংলগ্ন মোহনায় এফ বি মায়ের দোয়া নামক ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারটির এখনো হদিস মেলেনি।

নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় খুলনা মহানগরীসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বৃষ্টির পানি জমে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল সকাল থেকে খুলনা মহানগরীতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এর আগে সোমবার রাতে বৃষ্টি হয়েছে আরও ২৬ মিলিমিটার। এতে মহানগরীর বাইতিপাড়া, আহসান আহমেদ রোড, নবীনগর, সোনাডাঙ্গা ও খানজাহান আলী থানার আটরা গিলাতলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত বহাল রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল ভোর থেকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাতসহ ঝড়ো হাওয়ার কারণে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত পাঁচটি সার ও একটি চালের জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ রয়েছে। সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরের টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট ও মোংলা পোর্ট পৌর শহরের নিম্নাঞ্চলসহ নয়টি উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাতসহ নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কিছু চিংড়ি খামার তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জাল ও নেট দিয়ে চাষিরা খামারের মাছ আটকে রাখতে কাজ করছেন।

এদিকে বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই গতকাল বন্দরে সার, চাল, ক্লিঙ্কার, মেশিনারি ও গ্যাসবাহী ১৪টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর