বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পরিবারের চারজনকে হত্যার দায়ে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুদন্ড

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ভাই, ভাবি ও তাদের দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামি ছোট ভাই রায়হানুর রহমানকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদেশে আসামিকে সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। রায়হানুর রহমান কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের মৃত ডা. শাহজাহান আলীর ছেলে। মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামির বড় ভাই শাহীনুর রহমান ৮ বিঘা জমিতে পাঙ্গাশ মাছ চাষ করেন। ছোট ভাই রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাইয়ের সংসারে তিনি খাওয়া-দাওয়া করতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেন রায়হানকে।

সংসারে টাকা দিতে না পারায় ভাবি সাবিনা খাতুন রায়হানকে মাঝেমধ্যে গালমন্দ করতেন। এরই জেরে গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই শাহীনুর রহমান (৪০), ভাবি সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক বড়ি খাওয়ান রায়হান। পরদিন ভোর ৪টার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদের একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। হত্যাকারী ওই পরিবারের চার মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় ওই দিনই সাবিনার মা ময়না খাতুন বাদী হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখার (সিআইডি) সাতক্ষীরা অফিসের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আবদুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেফতার করেন। রায়হানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তদন্তে ২৮ জনের সাক্ষ্য ও রায়হানের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়হানকে একমাত্র আসামি করে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আবদুল মালেককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৪ জানুয়ারি রায়হানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৭ জন সাক্ষী ও আসামিপক্ষে একজন সাফাই সাক্ষী দেন। সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে রায়হানের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন।

নিহতদের পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের হেফাজতে আছে। এদিকে মামলার রায় শোনার পর রায়হানের স্বজনরা আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যার ১০ মাস ১৬ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। যে রায় হয়েছে তাতে আগামীতে কোনো ব্যক্তি যাতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটাতে সাহস না পায় তার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে আমি আশাবাদী।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম হায়দার আলী জানান, এ বিচারে তিনি খুশি হতে পারেননি। মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর