রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
খিলগাঁওয়ে গুলির ঘটনা

নেপথ্যে খুনের বদলা সঙ্গে আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুনের বদলা, সঙ্গে ছিল এলাকার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ। অনেকটা এক ঢিলে দুই পাখির টার্গেট নিয়েই ১৫ মে রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয় ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সাইফুল। ঘটনা তদন্তে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। শুক্রবার কুমিল্লা বরুড়ার আমড়াতলী এলাকা থেকে মনিরুজ্জামান সুমন ও মো. ইমনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের একটি দল। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, রাজধানীর খিলগাঁও থানার ত্রিমোহনী এলাকা থেকে দুটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি জব্দ করে তারা। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, কোনো ধরনের গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, ঝনাঝনানি বরদাশত করা হবে না। হাফিজ আক্তার বলেন, রিপন গ্রুপের সদস্য বাশার হত্যা মামলার ১ নম্বর অভিযুক্ত ছিলেন ভিকটিম সাইফুল।

 ওই মামলায় সাইফুল দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে সুমন গ্রুপ এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে থাকেন। ভিকটিম সাইফুল ইসলাম, কচি, রিপন ও সুমন ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন। সাইফুল ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রিপন ও সুমন দলীয় পর্যায়ে পদ-পদবি না পাওয়ায় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এরপর তারা পৃথক গ্রুপ তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে সুমন ও রিপন গ্রুপ একত্র হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

হাফিজ আক্তার বলেন, সাইফুল জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার হ্রাস পাওয়ার ভয়ে সুমন গ্রুপ ও রিপন গ্রুপ একত্র হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে রাস্তায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রিপন, কচি, সুমন ও ইমনসহ ১২ থেকে ১৩ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় সাইফুলকে রিপন দুই রাউন্ড ও সুমন এক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন সাইফুলের স্ত্রী। এর মধ্যে মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে কচি, রাসেল তালুকদার ওরফে চাপাতি রাসেল, উজ্জ্বল তালুকদার ও আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক পল্টি রিপনসহ অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। হঠাৎ করেই অস্ত্রের এমন ঝনঝনানির কারণ কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিবির প্রধান বলেন, ‘ডিএমপির পরিবেশ এখন আগের তুলনায় অনেক শান্ত। যদিও ২০ বছর আগে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দেখা যেত, হতো বোমাবাজি। গত চার মাসে রাজধানীতে যেখানেই অস্ত্রের মহড়া, বোমাবাজি হয়েছে, জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র-গুলি জব্দ করা হয়েছে। ২ কোটি মানুষের বসবাসের নগরী রাজধানীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে ডিএমপি। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো ধরনের গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, ঝনাঝনানি বরদাশত করা হবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর