সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

২২০০ ইয়াবা যখন ২০ পিস!

জামিন জালিয়াত চক্রের ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

আলী আজম

২০১৯ সালে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ইয়াবা বিক্রির ৩০ হাজার টাকাসহ শফিউল্লাহ খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিম্ন আদালতে একাধিকবার জামিনের চেষ্টা করেন তিনি। কোনো ফল না পেয়ে আসেন হাই কোর্টে। এখানে এসে নেন জালিয়াতির আশ্রয়। উচ্চ আদালত-নিম্ন আদালতের আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীদের যোগসাজশে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা নথিপত্রে হয়ে যায় মাত্র ২০ পিস। ফলে সহজেই জামিন মেলে হাই কোর্ট থেকে। তবে কিছুদিন না যেতেই বিষয়টি নিম্ন আদালত থেকে হাই কোর্টের নজরে আনা হয়। হাই কোর্টও জামিন বাতিল করে জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় করা মামলায় গত ৩১ আগস্ট চার আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত এসপি (মিডিয়া) আজাদ রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জামিন জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে সিআইডি সর্বদা তৎপর রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে এর আগে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামিন জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ইয়াবা বিক্রির ৩০ হাজার টাকাসহ শফিউল্লাহ খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আদালতে পাঠানো পুলিশের ফরওয়ার্ডিংয়ে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের কথা উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামির স্ত্রী হাছিনা বেগম স্বামী শফিউল্লাহর জামিনের জন্য গোপালগঞ্জ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ আলম সেলিম ওরফে মো. এন্তেখাফ আলম সেলিমের সঙ্গে চুক্তি করেন। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে সেলিম উকিল নামেও পরিচিত তিনি। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সেলিম উকিল আসামি শফিউল্লাহ খানের জামিনের জন্য গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করলে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালত নামঞ্জুর করে। দুই দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।

অভিযোগপত্রে সিআইডি বলে, হাই কোর্ট থেকে আসামিকে জামিনের জন্য সেলিম উকিল নিজের পূর্বপরিচিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মোস্তফা কামাল ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে আসামির জামিন করান। ওই জামিন আবেদনে মামলার এফআইআর, জব্দ তালিকা, ফরওয়ার্ডিং ও জামিন নামঞ্জুরের আদেশ কপি ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের স্থলে ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে হাই কোর্ট আসামিদের জামিন বাতিল করে জামিন জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। এরপর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার (ফৌজদারি-২) মো. জাকির হোসেন পাটোয়ারী বাদী হয়ে জামিন জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় জামিন জালিয়াতি চক্রের ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

আসামিদের মধ্যে মো. দাউদ মোল্লা ও মো. ওবায়দুর রহমান মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া আসামি অ্যাডভোকেট মোস্তফা কামাল আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

অভিযোগপত্রে থাকা পলাতক ১১ আসামি হলেন- শফিউল্লাহ খান, মনির হোসেন, মো. কামরুল ইসলাম, মো. আলী ফকির, মো. মোকলেস মোল্লা, মো. সিফাত মোল্লা, হীরা বেগম, হাছিনা বেগম, অ্যাডভোকেট এম এ আলম সেলিম ওরফে মো. এন্তেখাফ আলম সেলিম, অ্যাডভোকেট মো. হাবিবুর রহমান শেখ ও অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম পিন্টু।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর