বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া ৬৫ কোটি টাকা, অ্যাকশনে যাচ্ছে সিসিক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশনের বয়স প্রায় ১৯ বছর। পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও নিজস্ব আয়ের খাত খুব বেশি বাড়েনি স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানের। নিজস্ব আয়ের সব খাত মিলিয়ে উন্নয়ন কাজ তো দূরের কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করাই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। করপোরেশনের কাছে শতভাগ সেবা আশা করলেও কর পরিশোধে খুব একটা আগ্রহী নন নগরবাসী। ফলে দিনের পর দিন নগরবাসীর কাছে হোল্ডিং ট্যাক্স ও পানির বিলের মতো বকেয়া পাওনার পরিমাণ বেড়েই চলে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও আদায় করা সম্ভব হয় না এই পাওনা। বর্তমানে নগরবাসীর কাছে কেবল হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৬৫ কোটি টাকার ওপরে পাওনা আছে সিটি করপোরেশনের। বারবার নোটিসের পরও ট্যাক্স পরিশোধ না করায় এবার অ্যাকশনে নামতে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের পর বকেয়া পাওনা আদায়ে নগরজুড়ে শুরু হবে অভিযান। খেলাপিদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ে প্রয়োজনে জরিমানা ও মালামাল ক্রোকেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে করপোরেশন। সিসিক সূত্র জানায়, সদ্য ঘোষিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রায় ৮৩৯ কোটি টাকার বাজেটে নিজস্ব খাতে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮২ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের প্রায় ৯ ভাগ মাত্র। এর মধ্যে নিজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স।

এই খাত থেকে চলতি অর্থবছরে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিজস্ব খাতের আয়ের অর্ধেকের বেশি আয় ধরা হয়েছে হোল্ডিং ট্যাক্সে। অথচ এই খাতে নগরবাসীর কাছে সিটি করপোরেশনের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। একের পর এক নোটিস, মাইকিং ও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আদায় করা যাচ্ছে না এই বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স। খেলাপিদের মধ্যে যেমন রয়েছেন নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তরা, তেমনি রয়েছেন বিত্তশালীরাও। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিং মল এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে খেলাপির তালিকায়। বকেয়া ট্যাক্স আদায় না হওয়ায় সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ অবস্থায় সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেননি, তাদের আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বকেয়া সব ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। সময়মতো যারা ট্যাক্স পরিশোধ করবেন তাদের বিশেষ রেয়াতও দেওয়া হবে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর নগরজুড়ে একযোগে অভিযান শুরু হবে। তখন ট্যাক্স খেলাপিদের জরিমানা গুনতে হবে। এমনকি প্রয়োজনে মালপত্র ক্রোক করে ট্যাক্স আদায় করা হবে।

এ বিষয়ে সিসিকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ নগরবাসীর কাছে ৬৫ কোটিরও বেশি পায় সিটি করপোরেশন। ট্যাক্স পরিশোধ না করার তালিকায় যেমন নামকরা ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, তেমনি আছে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও। তবে এবার কঠোর অবস্থানে সিটি কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর ট্যাক্স পরিশোধ না করলে মালামাল ক্রোক ও জরিমানা আদায়সহ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরবাসী নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ না করলে উন্নয়ন কীভাবে হবে? এই ট্যাক্সের টাকা উন্নয়ন হিসেবেই নগরবাসীর কাছে ফিরে আসে। কিন্তু অনেকেই হোল্ডিং ট্যাক্সের সামান্য টাকাও পরিশোধ করতে চান না। যাদের কাছে বকেয়া ট্যাক্স পাওনা রয়েছে তাদের নোটিস করা হয়েছে। এরপরও ট্যাক্স পরিশোধ না করলে সিটি করপোরেশন কঠোর হতে বাধ্য হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর