শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাইরেই বেশি ব্যস্ত ডাক্তাররা

শেরেবাংলা মেডিকেলে খোলার দিনও অফিস সময়ের পর মিডলেভেলের ডাক্তার পাওয়া যায় না

রাহাত খান, বরিশাল

বাইরেই বেশি ব্যস্ত ডাক্তাররা

শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) বিভিন্ন ওয়ার্ডে। খোলার দিনও অফিস সময়ের পর মিডলেভেলের ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ সময় ইন্টার্ন ডাক্তারই ভরসা হাসপাতালের। তবে সরকারি ছুটির দিনে অতি জরুরি ছাড়া ইন্টার্নদেরও পা পড়ে না হাসপাতালের ২৪টি ওয়ার্ডে। যদিও হাসপাতালে বাই রোটেশনে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার বিধান রয়েছে।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শেবাচিমের জরুরি বিভাগে যান ব্যবসায়ী মো. আজিম। দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার তার প্রেসারসহ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। রাত সাড়ে ১২টায় চতুর্থ তলার মেডিসিন ইউনিট-৩-এ যাওয়ার পর একজন ইন্টার্ন চিকিসক তাকে একটি ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন। এ পর্যন্তই শেষ। এর পর থেকে গতকাল সারা দিনেও ওই ওয়ার্ডে পা পড়েনি কোনো ডাক্তারের। গতকাল দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মেডিকেলের পুরুষ ও মহিলা সার্জারি, প্রসূতি, শিশু, নাক-কান-গলা, চক্ষু বিভাগসহ অন্যান্য ওয়ার্ড ঘুরে সারা দিনেও ডাক্তার না পাওয়ার আক্ষেপ শোনা যায় রোগী ও স্বজনদের থেকে। একই অবস্থা অন্যান্য ওয়ার্ডেও। এমনকি পোস্ট অ্যাডমিশন ডেতেও (ভর্তির পরদিন রোগীকে খুঁটিয়ে পরখ করার কথা ডাক্তারদের) মিডলেভেলের কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না এসব ওয়ার্ডে। নামমাত্র একজন-দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে ওয়ার্ডের পুরো দায়িত্ব ফেলে রেখে ওইসব ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার ও ইনডোর মেডিকেল অফিসার চেম্বার করেন বাইরে। তারা ব্যস্ত থাকেন বাইরে। আবার অনেকে দূরদূরান্তের বিভিন্ন জেলা/উপজেলায়ও যান ওয়ার্ডের দায়িত্ব ফেলে রেখে। গতকালও ওইসব ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডলেভেলের ডাক্তার মহানগরের বিভিন্ন ডাগায়নস্টিক সেন্টারে দুই বেলা রোগী দেখেন বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। এদিকে মিডলেভেলের ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে প্রক্সিদাতা ইন্টার্ন ডাক্তাররাও পারতপক্ষে ওয়ার্ডে পা দেন না। অতি জরুরি হলে ডেকে আনতে হয় তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগীরা বলেন, শুক্রবার এ হাসপাতালে ডাক্তার না থাকা ‘রেওয়াজ’ হয়ে গেছে। শিশু বিভাগের প্রধান সরকারি খোলার দিনেও ওয়ার্ডে রাউন্ডে যান না বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। পরিচালক-উপপরিচালক পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাও এসব দেখভাল করেন না। খোদ পরিচালকের বিরুদ্ধেও অফিস সময় শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর অফিসে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সকাল ৮টায় হাসপাতলের অফিস সময় শুরু হলেও তিনি যান সাড়ে ১০টা, এমনকি ১২টার পরও। এপ্রিলে পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগ, ওয়ার্ড কিংবা দফতর পরিদর্শন করেননি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইনডোরে সার্বক্ষণিক সিনিয়র-জুনিয়র ডাক্তার থাকার কথা। সব বিভাগের প্রধান হলেন মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা। তারা ডিউটি রোস্টার করেন। কে কোথায় কখন দায়িত্বে থাকেন তা তারা ভালো জানেন। তারা কমপ্লেইন করলে যারা দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, ‘বাই রোটেশনে ইনডোর ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকতে হবে। চিকিৎসক সংকট আছে বটে, তার মধ্যেও রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে হবে।’ পরিবারের প্রধান যিনি আছেন তিনি একটু কঠোর হলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর