রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

যানজটে নাকাল নারায়ণগঞ্জ

সব রকম ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা, মিশুক ও ভ্যান চলাচল করছে অবাধে

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

যানজটে নাকাল নারায়ণগঞ্জ

হায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা! এক নং রেল গেট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত আসতে চল্লিশ মিনিট সময় লাগল। এক নং রেল গেট থেকে দুই নং রেল গেট পর্যন্তও একই অবস্থা। বাসের কাউন্টার ব্যস্ত সময়ে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ওই দিকে এক নম্বর রেল গেট থেকে কালীরবাজার পর্যন্ত হকার আর অটোস্ট্যান্ড। মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই।’

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেন বাসিন্দা শরীফ হোসেন। এরকম ভোগান্তিতে পড়ে অনেকেই জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।

সরেজমিন দেখা যায়, ‘শহরের চাষাঢ়া গোল চত্বর থেকে দুই নং রেল গেট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, সলিমুল্লাহ সড়ক, কালীরবাজার এলাকার সিরাজদৌল্লা সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তবে এ যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা তেমন দেখা যায়নি। এসব সড়কে যাতায়াতে মানুষের তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেও রওনা দিয়েছেন। মিনাবাজার এলাকার বাসিন্দা বাহারউদ্দিন বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে যানজটের ভোগান্তি বেড়ে চলেছে। হঠাৎ করে যেন শহর বন্ধ হয়ে গেছে। গাড়িগুলো বের হতে পারে না। সেটা সকাল কিংবা রাত যে কোনো সময়ই দেখা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জেনারেল হাসপাতাল থেকে পরীক্ষার জন্য রোগী নিয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যাচ্ছিলাম। মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের রাস্তায় একবার মন্ডলপাড়া নির্মাণাধীন ব্রিজের সমানে আধা ঘণ্টা রিকশায় বসে ছিলাম। তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে চুনকা পাঠাগারের সামনে ১০ মিনিট যানজটে আটকে ছিলাম। এখান থেকে ছাড়তে না ছাড়তেই আবারও ২নং রেল গেট মোড়ে যানজটে বসে থাকলাম। তারপর তো একটু একটু করে আরও আধা ঘণ্টা লেগেছে পপুলারে যেতে। এমন পরিস্থিতি হলে মানুষ কোথায় যাবে?

যানজটের কারণ হিসেবে সাধারণ পথচারীরা বলেন, ‘হঠাৎ করে শহরে প্রচুর রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক বেড়ে গেছে। এগুলো যত্রতত্র পার্কিং ও চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়াও রাস্তার দুই পাশে অবৈধ পার্কিংও যানজটের কারণ। দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল। তবে এগুলোর চেয়ে গুরুতর হলো শহরের বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো দুই নং রেল গেট এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড করে যাত্রী উঠানো, এলোপাতাড়ি রাখাসহ শহরের চাষাঢ়া ও আশপাশে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠা। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘যানজটের একটি প্রধান কারণ নিয়ম মেনে গাড়ি না চলানো। সবাই যদি নিজের দায়িত্ব থেকে গাড়ি চালায় যানজট হবে না। যত্রতত্র পার্কিং না করে। নগরীতে নির্দিষ্ট গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া শহরের তুলনায় রাস্তায় যানবাহনও অনেক বেশি। আর নগরীর অভ্যন্তরে ৩২ বার তিন পয়েন্টে রেল ক্রসিংয়ে আটকে যাওয়া। এ ছাড়াও নিজেদের লোকবল সংকটের কথাও বলেছেন তারা।’ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘অবৈধ যানবাহন নগরীতে চলাচল করে। ট্রাক চলাচল করে। সিটি করপোরেশনও লোকবল সংকট রয়েছে।’

এদিকে গত রবিবার থেকে সারাদিন জেলা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মাইকিং করে নির্দেশনা দেয়, সব রকম ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা, মিশুক ও ভ্যান শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। এ নির্দেশ কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তবে ঘোষণা দিলেও গত কয়েকদিন ধরে অবাধে চলাচল করছে এসব যানবাহন। এর বিরুদ্ধেও ট্রাফিক পুলিশের কঠোর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর