শিরোনাম
রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নিজেদের মধ্যে দ্ধন্ধে জড়িয়েছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা। এর ফলে শিক্ষা বোর্ডে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, কর্মকর্তাদের কে কাকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে দাফতরিক কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকালে বোর্ডের সচিবের কক্ষে নয়জন কর্মকর্তার বেতন স্কেল নির্ধারণ বিবরণী ও গোপনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করেন উপসচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র। এ কারণে এ দুই কর্মকর্তাকে সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ করা হয়। সচিবের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন। সচিবের কক্ষে দুই কর্মকর্তাকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ রেখে লাঞ্ছিত করার ওই ঘটনার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজও ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগেও সচিবের দফতর থেকে বিভিন্ন বেতন শিট বিকৃত করে এবং নোট শিটের কপি বাইরে সরবরাহ করার অভিযোগ আছে। ১২ সেপ্টেম্বর বোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন কিছু কর্মকর্তার বেতন সমন্বয় সংক্রান্ত নথি ও গুরুত্বপূর্ণ ফটোকপি করছিলেন। ওয়ালিদ হোসেন ও মানিক চন্দ্র সেন জানতে পেরে সেখানে যান। ওয়ালিদ হোসেন জানতে চান, সংস্থাপন শাখায় রক্ষিত গোপনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে কি না। এতে সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ওই দুই কর্মকর্তাকে রুমের ভিতর প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে সচিব আনসার সদস্যদের ডেকে ওয়ালিদ হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তিনি দুই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ভিডিও ফুটেজও ফাঁস করেছেন। এতে বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানান, আটকে রাখার সময় সচিব কখনো বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে এসেছ। আবার কখনো বা বলেছেন, তোমরা আমাকে তুলে নিতে এসেছ।’ ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন একাধিকবার বাইরে বের হতে চাইলেও সচিব দৌড়ে গিয়ে তাকে জাপটে ধরেন। আনসারকে দিয়ে জোরপূর্বক রুমে বসিয়ে রাখেন। তিনি পুলিশও ডাকেন। পরে ভুক্তভোগীরা অন্য সহকর্মীদের জানালে তারা গিয়ে দুজনকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনাটি লিখিতভাবে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মোকবুল হোসেনকে জানান ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা।

পরের দিন ১৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়ন বিশেষ সভার ডাক দেয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অফিসের গোপন কাগজপত্র অসৎ উদ্দেশ্যে ফটোকপি করা, চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া পুলিশ ডাকা ও দুই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ব্যাপারে তিন দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ওই ঘটনায় সার্বিক বিষয় বোর্ডের চেয়ারম্যান দেখবেন। আমি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলব না।’  শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোকবুল হোসেন বলেন, ‘সচিবের কক্ষে যা হয়েছে, তা দুঃখজনক। সেই ভিডিও ফুটেজ বাইরে ছড়িয়ে দেওয়াটিও দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর