সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ে বন্দী সিলেট ছাত্রলীগ

চার পদে চোখ ৮ গ্রুপের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

তিন বছর আগে কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। এরপর কয়েকবার পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ ও কর্মিসভা করেও আলোর মুখ দেখেনি কমিটি। মাঝে কমিটি নিয়ে তোড়জোড় হলেও ‘রহস্যজনক’ কারণে নীরব হয়ে যায় কেন্দ্র। বলা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগের গ্রুপিং। আগে আওয়ামী লীগের চার গ্রুপ নিজেদের অনুসারীদের মধ্যে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ চার পদ ভাগ করে নেওয়ায় কমিটি নিয়ে বিরোধ হতো না। এখন আওয়ামী লীগের গ্রুপ বেড়ে হয়েছে ৮টি। এ জন্য শীর্ষ চার পদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। স্থানীয় নেতাদের চাপে তারা কমিটি দিতে পারছেন না-এমন দাবি পদপ্রত্যাশীদের। সিলেট ছাত্রলীগকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের চারটি বলয়। নিজেরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাদের বলয়েই নিয়ন্ত্রিত হতো ছাত্রলীগ। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ তারা নিজেদের মধ্যেই ভাগ করে নিতেন। এই চার বলয় হচ্ছে টিলাগড় গ্রুপ, কাশ্মীর গ্রুপ, তেলিহাওর গ্রুপ ও দর্শনদেউড়ি গ্রুপ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল দর্শনদেউড়ি গ্রুপ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান তেলিহাওর গ্রুপ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার টিলাগড় গ্রুপ এবং মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক বিধান কুমার সাহা কাশ্মীর গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন। ২০১৫ সালে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে বাদ পড়ে কাশ্মীর গ্রুপ। নতুন করে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে ভাগ বসান মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন। এরপর থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব। বর্তমানে শীর্ষ চার পদে ভাগ চাইছেন আওয়ামী লীগের ৮ নেতা। এর মধ্যে চার গ্রুপের বাইরে আরও আছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সূত্র জানায়, গত ৭ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে  জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কমিটিতে টিলাগড় ও তেলিহাওর গ্রুপকে জেলা এবং দর্শনদেউড়ি ও কাশ্মীর গ্রুপকে মহানগরের শীর্ষ পদ দেওয়া হয়। এ খবর পাওয়ার পর অন্য গ্রুপের নেতারা তদবির করে কমিটি ঘোষণা থেকে বিরত রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের। এতে কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের চাঞ্চল্য নিমেষেই উবে যায়।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ মনে করেন- দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। দুর্বল হয়ে পড়ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। অনেকে ছাত্ররাজনীতি থেকে সরে গেছেন। এদিকে ছাত্রলীগের কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপ ও নেতৃত্ব বলয়কেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় ছাত্রলীগের প্রকৃত ত্যাগীদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এতে দলের মধ্যেও বিভেদ বাড়ছে বলে মন্তব্য সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের চার সদস্যের আংশিক কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর