বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান

ক্যাম্পাসে নির্মাণ হবে অনেক স্থাপনা, যুক্ত হবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরে পাড়ি জমিয়েও নানা সংকটে ভুগছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, বিশ্বমানের গ্রন্থাগার ও আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকা, আবাসিক হলে আসন সংকট, গণরুম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে বহিরাগত যানচলাচলসহ নানা সমস্যায় এখনো পর্যুদস্তু দেশের উচ্চশিক্ষার প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটি।

তবে, এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় হিসাব ধরে এই পরিকল্পনার আওতায় ১৫ বছরে তিন ধাপে প্রয়োজনীয় ৯৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হবে অনেক স্থাপনা, যুক্ত করা হবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ‘মাস্টারপ্ল্যান’ আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হলে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়নের জন্য ‘ডাটা এক্সপার্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা গত তিন বছর ধরে কাজ করে নকশা প্রণয়ন করেছে। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় পুরাতন বেশ কিছু ভবন ভেঙে ফেলে এবং ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে। ক্যাম্পাসে বিশ্বমানের গ্রন্থাগার সুবিধা, গাড়ি পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংসহ জলাধার, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক জিমনেশিয়াম ও মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনায় তিন ধাপে ৯৭টি ভবনের মধ্যে ১৭টি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর আবাসনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের জন্য আটটি, ছাত্রদের ১৬টি হল, হাউস টিউটরদের জন্য ২২টি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১২টি ও কর্মচারীদের জন্য ৯টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও ১৩টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এই প্রকল্পে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে নীলক্ষেত থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যে টানেল যাবে, সেটির খরচ এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। টানেলের ডিজাইন না হলে সেটি বলা যাবে না। এ ছাড়াও শাহবাগ থেকে হাই কোর্ট পর্যন্ত মেট্রোরেলের পশ্চিম পাশে ২টা লেন আছে। আমাদের প্রস্তাবনা আছে, এর পূর্বদিকে আরও দুটি লেন নির্মাণের। দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। সেটির খরচ এখনো হিসাব করা হয়নি। জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনাটি দেখেছেন। তিনি সার্বিকভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনাও দিয়েছেন। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় এটি থেকে উপকৃত হতে পারবে।

শিক্ষার্থীরা বছরে ২৭০ টাকা দিয়ে পাবেন চিকিৎসা সুবিধা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব নিয়মিত শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় বছরে মাত্র ২৭০ টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করে এখন থেকে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

 

বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী এ সুবিধা গ্রহণের জন্য প্রতি বছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের এককালীন বার্ষিক মাত্র ২৭০ টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। টাকা জমা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বীমা প্রিমিয়ামের একটি রসিদ পাবেন। এটি তাদের সংরক্ষণ করতে হবে। বীমা সুবিধা দাবির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে প্রিমিয়াম জমা রসিদ সংযুক্ত করতে হবে। চলমান শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় যেসব নিয়মিত শিক্ষার্থী বার্ষিক প্রিমিয়ামের টাকা দিতে পারেননি তারা যঃঃঢ়ং://ংঃঁফবহঃ.বরং.ফঁ.ধপ.নফ -ওয়েবসাইটে লগ-ইনের মাধ্যমে ‘হেলথ ইন্স্যুরেন্স’ বাটন ক্লিক করে প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে পারবেন।

স্বাস্থ্যবীমার আওতায় প্রত্যেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বীমা সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে হাসপাতালে থাকাকালে কেবিন বা ওয়ার্ড ভাড়া, হাসপাতাল সেবা, অস্ত্রোপচারজনিত ব্যয়, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি, ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিল বাবদ দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা চিকিৎসা ব্যয় পাওয়া যাবে।

আর বহির্বিভাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে বহির্বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ফি বাবদ প্রতি ব্যবস্থাপত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। কোনো শিক্ষার্থীর বয়স ২৮ বছর অতিক্রম করলে অথবা ছাত্রত্ব হারালে তিনি আর বীমা সুবিধা পাবেন না।

বীমাসংক্রান্ত সব শর্ত ও বিস্তারিত তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট https://student.eis.du.ac.bd  থেকে জানা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষার্থীরা ‘ক্লেইম ফরম’ ও ‘গ্যারান্টি অব পেমেন্ট রিকোয়েস্ট ফরম’ সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ছাড়া বীমাসংক্রান্ত কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের অফিসে যোগাযোগ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, জীবনবীমা সুবিধা পেতে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ওই চুক্তিতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বীমা সুবিধার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর