বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে কমিটি ঘোষণার পরই ছাত্রলীগে বিদ্রোহ বিক্ষোভ, পদত্যাগ

কোটি টাকায় পদ বিক্রির অভিযোগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। শীর্ষ দুই পদে নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। অভিযোগ উঠেছে জেলা ও মহানগর শাখার শীর্ষ চারটি পদ কোটি টাকায় বিক্রির। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে ছয়জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটি নিয়ে অসন্তোষের জেরে দুই কেন্দ্রীয় নেতা জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান ও মুহিবুর রহমান মুহিব পদত্যাগের ঘোষণা দেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্র থেকে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রাহেল সিরাজের নাম ঘোষণা করা হয়। আর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির হন সাবেক সদস্য কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ। এ চারজনের মধ্যে নাজমুল ইসলাম সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার নিয়ন্ত্রিত টিলাগড় গ্রুপ, রাহেল সিরাজ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান নিয়ন্ত্রিত তেলিহাওর গ্রুপ, কিশওয়ার জাহান সৌরভ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নিয়ন্ত্রিত দর্শনদেউড়ি গ্রুপ ও মো. নাঈম আহমদ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিধান কুমার সাহা নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির গ্রুপের নেতা। কমিটির শীর্ষ পদ পাওয়া থেকে বাদ পড়েন টিলাগড় গ্রুপের অন্য কর্ণধার মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলয়ের নেতারা। এ নিয়ে বঞ্চিত বলয়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান নিয়ন্ত্রণাধীন তেলিহাওর গ্রুপ থেকে রাহেল সিরাজ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেলেও নাখোশ গ্রুপের বড় অংশের নেতা-কর্মীরা। এ বলয় থেকে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খানকে সাধারণ সম্পাদক চেয়েছিলেন গ্রুপের শীর্ষ নেতারা।

কিন্তু জাওয়াদের পরিবর্তে রাহেল সিরাজ সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় গ্রুপের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা গতকাল বিকাল ৪টায় তেলিহাওর থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর জিন্দাবাজার আল-হামরা শপিং সিটির সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর বাধা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা চৌহাট্টায় গিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদ অভিযোগ করেন, ৩০ লাখ করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ চার পদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নেতা-কর্মীরা এ কমিটি মেনে নেননি, তাই তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

এদিকে, সন্ধ্যার পর সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলয়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। তারাও কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

অপরদিকে, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ছয় নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় সদস্যরা হলেন- জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, মুহিবুর রহমান মুহিব, কনক পাল অরূপ, হোসাইন মোহাম্মদ সাগর ও সঞ্জয় পাশী জয়। এর মধ্যে কমিটি ঘোষণার পরপরই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান ও মুহিবুর রহমান মুহিব পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে জাওয়াদ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুহিব সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন।

প্রসঙ্গত, জেলা ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং বিস্তর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ওই কমিটি বিলুপ্ত করে। অন্যদিকে, মহানগর ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি হয় ২০১৫ সালে। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিলুপ্ত করা হয় মহানগরের কমিটিও। এরপর থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছিলেন নতুন কমিটির অপেক্ষায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর