শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

অর্থাভাবে আটকে আছে সিলেটে ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষা

ভূমিকম্পে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে পরিচিত সিলেট। চলতি বছরের শুরুতে ঘনঘন ছোট ভূমিকম্পে আতঙ্ক বাড়িয়েছে সিলেটের মানুষের মনে। ভূমিকম্পের অনেকগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট শহর ও আশপাশের এলাকা। সিলেটের অভ্যন্তরে ছোট ছোট ফল্ট সক্রিয় হয়ে ওঠায় এই অঞ্চলে দফায় দফায় ভূমিকম্প হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় ভূমিকম্প সহনীয়তা নির্ণয়ে সিলেট নগরীর প্রায় ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। কিন্তু অর্থ সংকটে থেমে গেছে সেই উদ্যোগ। ফলে বড় ভূমিকম্পে সিলেটে জান-মালের বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে ভাবছেন নগরবাসী। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান আয়তন ২৬.৫ বর্গকিলোমিটার। সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত হোল্ডিংয়ের সংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। এর মধ্যে দুই থেকে ২১ তলা পর্যন্ত ভবন রয়েছে ৪১ হাজার ৯৯৫টি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কিছু ভবন জরিপ করে সিলেট সিটি করপোরেশন ৩৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর সংস্কারের মাধ্যমে ১০টি ঝুঁকিমুক্ত হলেও সিটি করপোরেশনের তালিকায় এখনো ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ২৩টি। তবে এখন পর্যন্ত মোট হোল্ডিংয়ের তুলনায় যৎসামান্য ভবন পরীক্ষা করে এই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের মতে, নগরীর ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষা গেলে কয়েক শ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে যে ভবনগুলো ধসে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ মে এবং ৬ জুন ভূমিকম্পে অন্তত ১০ বার কেঁপে ওঠে সিলেট। এই ঘটনার পর সিলেট সিটি করপোরেশন ১০টি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো পরিদর্শন করেন। এরপর তারা মার্কেটগুলোর ভূকম্পন সহনীয়তা নির্ণয়ে স্ট্রাকচারাল ম্যাপ ও সয়েল টেস্টের কাগজ চান। কিন্তু একটি ছাড়া অন্য কোনো মার্কেট তাদের কাগজ জমা দিতে পারেনি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর ঝুঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, ঘনঘন ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের সংকেত দিচ্ছে- বিশেষজ্ঞদের এমন সতর্কবার্তার পর সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীর ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য তারা ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ঢাকার ওই প্রতিষ্ঠানটি চারতলা একটা ভবন সার্ভের জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ফি চাচ্ছে।

সে হিসাবে সবমিলিয়ে নগরীর ৪০-৪২ হাজার ভবন পরীক্ষা করাতে ২৫-৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই খাতে এত বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করার মতো তহবিল নেই।

প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, নিয়মমতো ভবন পরীক্ষার টাকা সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু কেউই টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না। তাই সিটি করপোরেশনকে ‘ধীরে চল’ নীতি অবলম্বন করতে হচ্ছে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি গণমাধ্যমকে জানান, ‘গত দু-তিন বছরে দেশে ভূমিকম্পের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আবার ১০০ বছরের মধ্যে আমাদের এখানে বড় ভূমিকম্প হয়নি তেমন। এটা একটা জিনিস নির্দেশ করে যে, এগুলো শক্তি সঞ্চয় করছে। ফলে সামনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে।’

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর