সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

টি-ব্যাগের ক্যানভাসে শিল্পকর্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

টি-ব্যাগের ক্যানভাসে শিল্পকর্ম

ছবি যেন শব্দহীন যোগাযোগের বিমূর্ত প্রতীক- এ কথাটিই জীবন্তভাবে ধরা দেয় বিশ্বের নানা শিল্পী, চিত্রগ্রাহকের ছবির মাধ্যমে। গহিন অরণ্য বা মরুভূমির ছবি থেকে শুরু করে ভ্রমণের ছবি, রং-তুলিতে আঁকা শৈল্পিক ছবি, পরিচিত-অপরিচিত নানা শিল্পের ছবি, দেশি-বিদেশি শিল্পী, গায়ক, অভিনেতার দৈনন্দিন ছবি পর্যন্ত- কীসের ছবি নেই এখানে, সবকিছুর-ই সন্ধান মেলে এ মাধ্যমটিতে। ব্যতিক্রমী কোনো শিল্প বা ছবি আলোড়ন তোলে প্রায়ই। এ রকমই একজন আলোড়ন তোলা মানুষ মো. সাদিতউজ্জামান সাদিত এবং তার টি-ব্যাগের ক্যানভাসে করা শিল্পকর্ম। টি-ব্যাগে করা শিল্পকর্ম, শুনতে কিছুটা অদ্ভুত শোনায়। একে তো ফেলনা জিনিস, তার ওপর ছোট্ট একটি টি-ব্যাগ, স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে এমন বস্তু দ্বারা কি তা সম্ভব? সম্ভব হলেও কীভাবে সম্ভব? কিংবা কতটুকুই নিখুঁত বা জীবন্ত হতে পারে এমন কোনো শিল্প এ ধরনের প্রশ্ন মনে আসবে খুব স্বাভাবিকভাবেই। কোনো খাদ্যবস্তু থেকেও এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী ধারার বাস্তব রূপ দেওয়া যায়, সর্বসাধারণের চিন্তার বাইরের এ কাজটিই করেছেন টগবগে এই তরুণ। কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও তার তৈরি শিল্পের ছবি দেখলেই সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। রংতুলির আঁচড়ে বিখ্যাতজন, প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো জীবন্ত করে তুলেছেন চিত্রশিল্পী মো. সাদিতউজ্জামান সাদিত। কী নেই টি-ব্যাগের ক্যানভাসে! টি-ব্যাগের ক্যানভাসে এঁকেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, আছেন জাতীয় কবি নজরুলও। টি-ব্যাগেই রেলস্টেশন, যাত্রীবোঝাই বাস, ময়ূর কিংবা বর্ষার প্রথম কদমফুল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ধর্মীয় সম্প্রীতি, রঙিন কৃষ্ণচূড়া কিংবা সুবিশাল চা-বাগান সবই যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় তার হাতে। এ বৈচিত্র্যময় খুদে শিল্পকর্ম এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে দেশ-বিদেশে।

সাদিতের বাড়ি রাজশাহী মহানগরের লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা এলাকায়। তিনি রাজধানী ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি আর বিবিএ, এমবিএ করেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে।

সাদিতউজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে শুরু হয় তার এই শিল্পচর্চা। কীভাবে শুরু? হ্যাঁ, অবশ্যই হুট করে নয়, কোনো কিছু দেখে কৌতূহল উদয় হওয়ায় এবং সেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই শুরু। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকায় ঝোঁক। তার বাবা একবার এক বাক্স আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলেন ছোট্ট সাদিতকে। খাওয়ার পর আইসক্রিমের বাক্সটি ফেলে না দিয়ে তার ওপর রংতুলির আঁচড় দিতে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকল এক দৃষ্টিনন্দন গ্রাম। পরিত্যক্ত আইসক্রিমের বাক্সই হয়ে উঠল ছবি।

সেই শুরু। পরিত্যক্ত কোনো কিছুকে ছবির ক্যানভাস বানিয়ে ফেলার কাজ এখনো করে যাচ্ছেন সাদিত। একটু ফুরসত মিললেই বসে পড়েন রংতুলি নিয়ে।

ছোটবেলায় তার সেজো খালা নূর ই হাফসা পারভীনের প্রভাবও তার ওপর পড়েছে। তার খালাকে দেখেই তার মধ্যে বিভিন্ন ফেলে দেওয়া জিনিসকে নতুনভাবে ব্যবহার করার আগ্রহটা তৈরি হয়েছে। প্রধানত রিসাইকেল ম্যাটেরিয়াল নিয়ে কাজ করার আগ্রহটাও এখান থেকেই। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও টি-ব্যাগে ছবি আঁকার অনুপ্রেরণাটা তিনি পেয়েছেন মার্কিন চিত্রশিল্পী রুবি সিলভিয়াসের কাছ থেকে।

সারা পৃথিবীতে টি-ব্যাগে ছবি আঁকেন এমন শিল্পীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রুবি সিলভিয়াস অন্যতম। রুবি সিলভিয়াসের রিসাইকেল ফর্মের কাজ দেখেই তার মধ্যে এই আইডিয়াটি আসে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি টি-ব্যাগ ক্যানভাসে ছবি আঁকা শুরু করেন।

সাদিতউজ্জামান সাদিত মনে করেন পরিবার তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার জায়গা। তিনি বলেন, যে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করার জন্য তার আশপাশের পরিবেশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে সবক্ষেত্রেই জীবনকে উপভোগ করতে শেখানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর