মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
জাসদের গোলটেবিল বৈঠক

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাসদের গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। তারা বলেন, বিএনপি যতদিন সাম্প্রদায়িক শক্তির মাথার ওপর ছাতা ধরে রাখবে, ততদিন সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।

‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস : রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তুলতে হলে অসাম্প্রদায়িক দলগুলোতে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানপন্থি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। প্রশাসনের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য অধ্যাপক ড. সুশান্ত দাস, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ প্রমুখ।

বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো করানো হচ্ছে ভাড়াটিয়া, মতলববাজদের দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন করোনা মোকাবিলা করা হচ্ছে, যখন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে, তখন সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটানো হচ্ছে। আসলে সরকারকে বিব্রত করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে এগুলো করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের অংশ। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।

সভাপতির ভাষণে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এই হামলার একটা সুদূর প্রসারিত পরিকল্পনা রয়েছে। এটা শুধু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নয়, এটা রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এটা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের লড়াই নয়, এটা অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির লড়াই। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য দ্রুত সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব অসাম্প্রদায়িক দল রয়েছে, সেগুলোতে ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের’ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সংঘবদ্ধচক্র মানুষকে বিভাজন করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের সেই নীলনকশা কখনই সফল হবে না। তিনি বলেন, আজ যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরি হয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ হতে হবে বাংলার মুজিব আদর্শের উত্তরাধিকারদের দ্বারা। তাহলে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্মিলিতভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। 

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় দেশে এমন ঘটনা ঘটবেই।

বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলা শুধু হিন্দুদের বাড়িঘরে, মন্দিরে হামলা নয়, এটা দেশের বিরুদ্ধে হামলা। এ ঘটনায় শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা নিজেদের সংখ্যাগুরু হিসেবে দাবি করে তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর