বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আমদানির পথেই লুট স্ক্র্যাপ লোহা

কোটি কোটি টাকা ক্ষতি ব্যবসায়ীদের জেলা ও নগরীর ভয়ংকর ৩০ স্পট

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইস্পাত কারখানায় যাওয়ার পথেই লুট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার স্ক্র্যাপ লোহা। নগরী ও জেলার কমপক্ষে ৩০টি স্পটে স্ক্র্যাপ লুট নিত্যচিত্র হলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না প্রশাসন। প্রতিনিয়ত স্ক্র্যাপ লুটের ফলে কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়ছেন চট্টগ্রামের ইস্পাত ব্যবসায়ীরা। সিএমপির উপ-কমিশনার পশ্চিম ওয়ারিশ আহমেদ বলেন, বন্দর থেকে স্ক্র্যাপ লোহা কারখানায় নেওয়ার পথে চুরি হয় এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। গত ২ মাসে এ ধরনের পাঁচটি মামলা হয়েছে সিএমপির পশ্চিম জোনে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৯ জন। স্ক্র্যাপ চুরি বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।  চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুন্ড সার্কেল) আশরাফুল করিম বলেন, চালক ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তির যোগসাজশে চুরির ঘটনাগুলো ঘটছে। এরই মধ্যে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।  ইস্পাত ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি করা স্ক্র্যাপ বন্দর থেকে কারখানায় নেওয়ার পথে প্রায়ই লুট হয়। সীতাকুন্ড এবং নগরীর বিভিন্ন থানায় এসব ঘটনায় অনেক মামলাও হয়েছে। স্পট এবং লুটের হোতারা চিহ্নিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। চিহ্নিত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। জানা যায়, দেশের উৎপাদিত ইস্পাতের বেশির ভাগ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের ইস্পাত কারখানাগুলোতে। এসব কারখানার কাঁচামালের জোগান দিতে প্রতি বছরই ৪০ লাখ টন স্ক্র্যাপ আমদানি করতে হয় ইস্পাত কারখানাগুলোকে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব ইস্পাত চট্টগ্রাম বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার বিভিন্ন কারখানায় যায়। বন্দর থেকে কারখানায় যাওয়ার পথে ট্রেইলার কিংবা ট্রাক ড্রাইভারদের সহায়তায় কন্টেইনার থেকে লুট হচ্ছে হাজার হাজার টন স্ক্র্যাপ লোহা। চট্টগ্রাম নগরীর স্ক্র্যাপ লোহা লুট করে এমন বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে নগরী ও জেলায়। তারা কমপক্ষে ৩০টি স্পটে স্ক্র্যাপ লোহা লুট করে। এ স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলার কুমিরা রয়েল গেট, আব্বাসপাড়া, বাইপাস মোড়, জেলেপাড়া, ভাটিয়ারী শিপইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকা, মাদানবিবির হাট, বার আউলিয়া, তেলের পাম্প এমএমটি গ্যারেজ, বারবকুন্ড, আনোয়ারা জুট মিল, সুলতানা মঞ্জিল, সীতাকুন্ড শেখপাড়া, বড় দারোগা হাট স্কেল ও মিরসরাই ফিলিং স্টেশন। নগরীর সদরঘাট, মাঝিরঘাট স্কেলের প্রবেশমুখ, বিশ্বরোডের মোড়, ধনিয়ালাপাড়া বায়তুশ শরফ মাদরাসার সামনে, দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে, ঈদগা কাঁচা রাস্তার মোড়, নয়াবাজার হাক্কানি পেট্রোল পাম্প, সল্টগোলা ক্রসিং, টোল রোডের টোলপ্লাজা সংলগ্ন চোচালা ব্রিজ, চিটাগাং ফিলিং স্টেশনের পর, শুকতারা পয়েন্ট, বাংলাবাজার বেড়িবাঁধ, ডিএবি গ্যারেজের সামনে, চৌধুরী ঘাটা অন্যতম। স্ক্র্যাপ আমদানিকারকরা জানান, স্ক্র্যাপ রপ্তানিকারকরা কন্টেইনার সিলগালা করে একটি বিশেষ সিল দিয়ে চালান বাংলাদেশে পাঠান। কিন্তু ওই কন্টেইনার বন্দর থেকে ইস্পাত কারখানায় যাওয়ার পথে ট্রেইলার চালকদের যোগসাজশে প্রতি কন্টেইনার থেকে ২ থেকে ৩ টন স্ক্র্যাপ লোহা সরিয়ে ফেলে। একেকজন আমদানিকারকের প্রতি চালানে ৩০ থেকে ৩৫ টন লোহা লুট হয় বন্দর থেকে কারখানায় যাওয়ার পথে।

ফলে চালানপ্রতি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৮ লাখ টাকা। এভাবে স্ক্র্যাপ লোহা লুট হওয়ার ফলে বছর শেষে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

জিপিএইচ ইস্পাতের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এক চালানে ২০ কন্টেইনার স্ক্র্যাপ লোহা আসে। কিন্তু বন্দর থেকে কারখানায় যাওয়ার পথে লুট হয়ে যায় ৩৫ টন স্ক্র্যাপ। ফলে এক চালানেই জিপিএইচের ক্ষতি হয়েছে ১৭ লাখ টাকার মতো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর