বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তার ভাঙনে মানুষ দিশাহারা

কুড়িগ্রামে খোলা আকাশের নিচে বসবাস

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে তিস্তাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে নদীর অববাহিকার হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ১৫টি পয়েন্টে নদীভাঙনে ৫ শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এতে শুধু রাজারহাটেই ১৫০ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। নদীর তীব্র স্রোতের ফলে জমে থাকা কাদা ও বালুর নিচে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে গেছে এসব এলাকার ৫০০ হেক্টর জমির ধান, আলু, মাষকলাই, বেগুন, মরিচ ও বাদামের বীজতলা। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বারবার এমনটি হচ্ছে বলে ভাঙনকবলিতরা জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া না গেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে না। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশ্যাম, বগুড়াপাড়া ও বুড়ির হাট এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, রামহরি ও কালিরহাট এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে। এ ছাড়া উলিপুর উপজেলার ঠুটাপাইকর, বজরা, কাসেমবাজার, থেতরাই ও পাকারমাথা এলাকায়ও তিস্তা নদী ভাঙছে। এসব এলাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই শতাধিক পরিবার তাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। রাজারহাটের গতিয়াশ্যাম এলাকায় নামাভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গতিয়াশ্যাম কমিউনিটি ক্লিনিক নদীভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এসব এলাকায় নদীর কড়াল গ্রাস থাবা মারার আশঙ্কা স্থানীয়দের। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের বসতবাড়ি, গাছপালা, আবাদি জমি, আসবাবপত্রসহ তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র নদীতে চলে যায়। গতিয়াশ্যাম এলাকার জমশেদ আলী বলেন, ‘তিস্তা নদী প্রতিবার ভাঙে। গত এক মাসে নদীতে আমাদের বাড়িঘর গাছপালা জমির ফসল সব ধুয়েমুছে নিয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে বন্যার পানির স্রোতে আরও প্রায় ২০টি ঘর নদীতে গেছে।’ বাড়িঘর আবাদি জমি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার অনেক মানুষ। তাদের এখন কান্না আর কান্না। ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে ও জিও টিউব ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না বলে নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ। ইতিমধ্যে ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশ্যাম ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নদীভাঙন এলাকা স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিদর্শন করে ভাঙনকবলিতদের দুর্দশা দেখে সমবেদনা জানালেও এখনো স্থায়ীভাবে কোনো কাজ না হওয়ায় হতাশ তারা।

 রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভাঙন প্রতিরোধে কবলিতদের জন্য রিলিফ চাই না। আমরা চাই নদীভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করা হয়।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে ১৫টি স্পটে ভাঙনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তা নদীর বাঁ তীরে ভাঙনকবলিত স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে ঊর্ধ্বতন দফতরে কারিগরি কমিটি গঠনের নোট প্রেরণ করেছি। কারিগরি কমিটি এখানে ভিজিট করে যে পরামর্শ দেবে। সে মোতাবেক আমরা প্রকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর