রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যক্তি, গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব সংবাদপত্রের নয়

-সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব সংবাদপত্রের নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দেশের সংবাদপত্রগুলোকে জনস্বার্থ, ন্যায়বিচার, সুশিক্ষা, পরিবেশ, নারী সুরক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতা তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সাংবাদিকতা কখনো যেন হলুদ রং ধারণ না করে। বিদ্বেষ যেন প্রকাশিত না হয় তিনি সেই কামনা করেন।

গতকাল সিরডাপ মিলনায়তনে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, দেশে সাংবাদিকতা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও টিকে থাকা বড় অর্জন। অর্জনের এই পাল্লা আরও ভারী করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকলেই সংবাদপত্র টিকে থাকবে। তাই সবাই মিলে সত্যিকারের গণতন্ত্র তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও সহনশীল হতে হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকতায় মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা, কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের অব্যাহত দাম বৃদ্ধি, বিজ্ঞাপনের অপ্রতুলতা অথবা শর্তযুক্ত বিজ্ঞাপনের বিষয় আছে। তিনি বলেন, অর্জন বড় হয় যখন সীমাবদ্ধতা বেশি থাকে। সে বিচারে বাংলাদেশে সংবাদপত্রগুলোর অর্জন অনেক বড়। তারপরও এ দেশের সংবাদপত্রগুলো সত্য প্রকাশে কতটা বস্তুনিষ্ঠ তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে মতপ্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিককে আদালতে যেতে হবে, সেটা কখনো কাম্য নয়। এর সমাধান হতে পারে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করা। এটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে এর ওপর সবার আস্থা থাকে। যারা অন্য কিছুতে প্রভাবিত হবেন না। সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের তুলনামূলক অবস্থান প্রসঙ্গে অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম বলেন, সংবাদপত্র ও অনলাইনের মধ্যে বিরোধ থাকার কথা নয়। আমাদের দেশের সংবাদপত্রের সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সংবাদপত্র টেলিভিশনের সঙ্গেও টিকে থাকছে। তরুণদের ভিতর সংবাদপত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহ তৈরি হচ্ছে। সাংবাদিকতায় দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখতে পাচ্ছি। অনেকটা রাজনৈতিক দলের মতোই বিভাজন। যে কারণে দাবি আদায়সহ সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। অনেক পত্রিকা বিকল্প প্রতিনিধির ভূমিকা নিয়ে নিচ্ছে। আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে কোনো বিভাজন থাকা উচিত নয়। সাংবাদিকতা করতে এসে কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখা যাবে না। টিকে থাকারও একটা সংগ্রাম আছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সবাই মিলে সত্যিকারের গণতন্ত্র তৈরি করতে হবে। তাহলেই সংবাদপত্র টিকে থাকবে। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, দ্য নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবীর, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর