শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অবৈধ অস্ত্র আনছেন বৈধ ব্যবসায়ীরা, গ্রেফতার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমান্তের ফাঁক গলে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আনা হচ্ছে একে-৪৭ রাইফেলসহ অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। পরে বৈধ অস্ত্র ব্যবসার আড়ালে সেগুলো তুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে। মূলত চড়া দামে বিক্রি করে অধিক লাভের আশায় এই পন্থা বেছে নিয়েছেন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ নাশকতার উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করেছে বৈধ লাইন্সে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি চক্রের সদস্যরা। ফলে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অস্ত্রগুলো উদ্ধারে এগুলোর ক্রেতাদের খোঁজে মাঠে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এই চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমনই তথ্য দিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত রবিবার সন্ধ্যায় ওই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগরে বৈধ অস্ত্রের দোকান মালিক মো. হোসেন, রাঙামাটির বরকল থানা এলাকার লাল তন পাংখোয়া এবং মো. হোসেনের দুই সহযোগী চট্টগ্রামের রাউজানের মো. আলী আকবর ও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী এলাকার মো. আদিলুর রহমান সুজন। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি শটগান, একটি রিভলবার, ৩টি পিস্তল ও ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

জব্দকৃত গুলির মধ্যে একে-৪৭ এর গুলি থাকায় সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, কোনো একে-৪৭ ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে গুলিগুলো হস্তান্তর করতে চেয়েছিল চক্রটি। গ্রেফতার মো. হোসেন এর আগেও একই অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এদিকে গতকাল তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছে।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রাম মহানগরে তার একটি অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকান ব্যবহার করে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। এ ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র বিক্রিতে হোসেন এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরাতন অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন। বিশেষ করে যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন এখন মারা গেছেন, আবার কেউ কেউ এই অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না- তাদের লাইসেন্স টার্গেট করা হতো। পরে ওই লাইসেন্স সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে অস্ত্র কিনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এ রকম একটি লাইসেন্স দিয়ে কেনা।

গ্রেফতার লালতন পাংখোয়া এক সময় বড়কল এলাকার সাইচাল পাংখোয়া পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবানের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র-গুলি চোরাচালানে জড়িত। এসব অস্ত্র তিনি পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। মো. হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে অস্ত্র-গুলি ক্রয় করতেন। সেসব অস্ত্র হোসেন ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী আকবর এবং সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন। এ ছাড়াও তারা (আদিল ও সুজন) অবৈধ অস্ত্র-গুলি চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান আহমেদ, কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলের কাছে বিক্রি করতেন।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, চক্রটি যাদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করত এবং যাদের কাছে বিক্রি করত তাদের অনেকের নাম পাওয়া গেছে। গ্রেফতারদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা পুনরায় অভিযান চালাব। গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া একে-৪৭ এর গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের কাছে অর্ডার করেছিল বলে ধারণা করছি। কার কাছে একে-৪৭ এর গুলি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন সেগুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। আমাদের ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও কক্সবাজারের বড় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর