বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রবাসী প্রার্থীদের দাপট ইউপিতে

অবৈধ টাকার ছড়াছড়ি, সিলেটের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

স্থানীয় রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় না থাকলেও কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেন সিলেটের প্রবাসীরা। নির্বাচন এলে সুদূর প্রবাস থেকে উড়ে এসে তারা বাগিয়ে নেন দলীয় মনোনয়ন। কেউ কেউ দলীয় প্রতীকের জোরে হয়ে যান জনপ্রতিনিধিও। সিলেটের রাজনীতি ও নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরেই এমন প্রভাব চলে আসছে প্রবাসীদের। এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দাপট দেখিয়েছেন প্রবাসী প্রার্থীরা। স্থানীয় নেতাদের টেক্কা দিয়ে সিলেটের বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন তারা। কেউ কেউ আবার প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্রের ব্যানারে। প্রবাসীরা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে টাকার অবৈধ লেনদেন এবং ভোটার প্রভাবিত করার আশঙ্কা করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ১১ নভেম্বর সিলেট জেলার তিন উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহণ। এ ১৫ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬৮ জন। এর মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নে আটজন প্রবাসী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনজন প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে দুজন এবং মোগলগাঁও ইউনিয়নে একজন, বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নে তিনজন, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে একজন ও দেওয়ানবাজার ইউনিয়নে একজন প্রবাসী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। প্রবাসীদের মধ্যে জালালাবাদ ইউনিয়নে ফ্রান্স প্রবাসী জয়নাল আবেদীন ও বাহরাইন প্রবাসী সমছুল হক স্বতন্ত্র থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন। সমছুল বাহরাইন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত। এলাকায় শিক্ষাবিস্তারে তিনি ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হিরণ মিয়া এবারও প্রার্থী হয়েছেন নৌকা প্রতীকে। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হিরণ মিয়া আগের বারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বেশির ভাগ সময় যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছিলেন। বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম যুক্তরাজ্য প্রবাসী। দেশটিতে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে আছেন আমিরুল। গেল নির্বাচনের মতো এবারও তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ইউনিয়নে তার সঙ্গে প্রার্থী হয়েছেন আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহিবুল রহমান ও ইতালি প্রবাসী আবদুর রহমান। বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে গেল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. আবদুল মতিন। কিন্তু এবার দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তিনি সরে দাঁড়াননি নির্বাচন থেকে। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন তিনি। বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ছহুল এ মুনিম দলীয় মনোনয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। প্রবাসীদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন), সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় এখানে প্রবাসীদেরও প্রার্থী হতে দেখা যায়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, প্রবাসী যারা প্রার্থী হন, তারা টাকার লেনদেন করেন। নির্বাচন কমিশন এসব ক্ষেত্রে তেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর